বাংলায় বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা (SIR) নিয়ে ফের রাজনৈতিক তপ্ত হাওয়া। তৃণমূল কংগ্রেস স্পষ্ট জানিয়েছে— বাংলায় যদি একজন বৈধ ভোটারের নামও ভোটার তালিকা থেকে বাদ যায়, তাহলে তারা রাস্তায় নামবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে সহ দলের শীর্ষ নেতৃত্ব একাধিকবার জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে এই বিষয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এর মধ্যেই সোমবার কমিশন ঘোষণা করেছে, পশ্চিমবঙ্গ সহ ১২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে শুরু হচ্ছে SIR প্রক্রিয়া। ঘোষণার পরই প্রশ্ন উঠেছে— এই অবস্থায় বাংলায় সমীক্ষা চালাতে গিয়ে কতটা সমস্যার মুখে পড়তে পারে নির্বাচন কমিশন?
এই প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের কথা যদি বলি, কোনও বিরোধ নেই (SIR)। সংবিধানের অন্তর্গত প্রত্যেক সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নিজের দায়িত্ব পালন করে। নির্বাচন কমিশন বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা চালিয়ে তার দায়িত্ব পালন করছে। রাজ্যগুলিও তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করবে।”
তৃণমূলের নেতারা যেভাবে এসআইআর (SIR) নিয়ে পরপর হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন, তাতে বাংলায় এই প্রক্রিয়া চালানো কঠিন হবে কি না— এমন প্রশ্নও ওঠে সাংবাদিক বৈঠকে। জবাবে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বলেন, “আমি পরিষ্কার করে দিতে চাই, সংবিধানের অধীনে প্রত্যেক সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে নিজের দায়িত্ব পালন করতে হয়।”
এরপর তিনি সংবিধানের অনুচ্ছেদ উদ্ধৃত করে বলেন, “সংবিধানের ৩২৪ অনুচ্ছেদের ৬ নম্বর উপধারা অনুযায়ী, ভোট প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে প্রয়োজনীয় কর্মী ও সহযোগিতা দেওয়া রাজ্য সরকারের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা (SIR)। ঠিক তেমনই আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা রাজ্য সরকারের দায়িত্ব।”
তিনি আরও বলেন, “আমার বিশ্বাস, নির্বাচন কমিশনের মতো রাজ্য সরকারও তার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করবে।”
নির্বাচনী বিশেষজ্ঞদের মতে, কমিশনের এই বার্তা স্পষ্টভাবে তৃণমূলের হুঁশিয়ারির জবাব। তৃণমূল নেতৃত্ব যেখানে বারবার বলছে, বৈধ ভোটারের নাম বাদ গেলে তারা আন্দোলনে নামবে, সেখানে কমিশন জানিয়ে দিল— সংবিধান যা বলেছে, সেটাই হবে।
প্রসঙ্গত, বাংলায় SIR শুরু হচ্ছে ২৮ অক্টোবর থেকে। বাড়ি-বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা যাচাইয়ের কাজ চলবে ডিসেম্বর পর্যন্ত। এরপর ২০২৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হবে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা। এর মধ্যেই যদি কোনও অনিয়মের অভিযোগ ওঠে, তা আইনি পথে নিষ্পত্তি করা হবে বলেই স্পষ্ট করেছে কমিশন।
রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, বাংলায় এসআইআর এখন শুধু প্রশাসনিক প্রক্রিয়া নয়, তা হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক মুখোমুখি লড়াইয়ের নতুন কেন্দ্রবিন্দু। একদিকে তৃণমূলের আন্দোলনের হুঁশিয়ারি, অন্যদিকে কমিশনের দৃঢ় অবস্থান— দুইয়ের টানাপোড়েনে আগামিদিনে রাজ্য রাজনীতি আরও উত্তপ্ত হতে চলেছে বলেই মনে করা হচ্ছে।










