২১ জুলাইয়ের শহিদ দিবসের মঞ্চ থেকে ফের একবার কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরানোর ডাক দেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি হুঁশিয়ারি দেন, যতদিন না বিজেপি সরকারকে উৎখাত করা যাচ্ছে, ততদিন তৃণমূলের লড়াই চলবে। এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য (Samik Bhattacharya)। এক প্রেস কনফারেন্সে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর একের পর এক মন্তব্যকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ তোলেন।
দিল্লিতে সাংবাদিকদের সামনে শমীক (Samik Bhattacharya) বলেন, “আমরা মুখ্যমন্ত্রীর দীর্ঘায়ু কামনা করি। তিনি যেন শতায়ু হন। তবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায়, তিনি জীবদ্দশায় কোনওদিন বিজেপিমুক্ত ভারত দেখতে পারবেন না।” তিনি (Samik Bhattacharya) আরও বলেন, বিজেপির লড়াই একমাত্র পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের অপশাসনের বিরুদ্ধে, বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে এবং প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে। রাজ্যের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্যই বিজেপি সংগ্রাম করছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষা আন্দোলনের ডাক নিয়েও কটাক্ষ করেন শমীক (Samik Bhattacharya)। তাঁর কথায়, “বাংলা ভাষার কথা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী, অথচ তাঁরাই বারবার বাংলার ইতিহাসকে বিকৃত করছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো মনীষীদের আক্রমণ করেছেন তৃণমূল নেতারা। ইতিহাস ভুলিয়ে দেওয়া, বাংলা ভাষার নামে রাজনীতি করাই এখন তৃণমূলের প্রধান কাজ।”
বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে বাংলাভাষীদের উপর অত্যাচার ও বিদ্যুৎ-জল বন্ধ করে দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে মমতা যেভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন, তা নিয়েও পাল্টা দেন শমীক। তিনি বলেন, “যেখানে আদালতের নির্দেশ রয়েছে, সেখানে আইন মেনেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ভুল তথ্য ছড়িয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করছেন।”
এর পাশাপাশি, শমীক ভট্টাচার্য অভিযোগ করেন, তৃণমূল কংগ্রেস ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি করতে বাংলাদেশি মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের ভুয়ো পরিচয়পত্র, রেশন কার্ড দিয়ে রাজ্যে ঠাঁই দিচ্ছে। এমনকি, রোহিঙ্গাদের কলকাতা, বিধাননগর-সহ রাজ্যের নানা জেলায় বসত গড়ে তোলা হয়েছে। তিনি বলেন, “এরা বাংলাদেশের নাগরিক। যেদিন ধরা পড়ছে, সেদিন মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, বাঙালিদের উপর আক্রমণ করা হচ্ছে। এভাবে গোটাটাই ঘোলাজলে মাছ ধরার রাজনীতি।”
ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ পড়ার প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভ নিয়েও সাফ জবাব দেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। তিনি বলেন, “তৃণমূল চায় যেন জাতীয় নির্বাচন কমিশনও রাজ্যের মতো কাজ করে। কিন্তু দেশের মানুষ পরিচ্ছন্ন ও বৈধ ভোটার তালিকাই চান। বহু ভুয়ো নাম বাদ যাবে, এটিই সত্যি।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি অনুযায়ী রাজ্যে ৪০ শতাংশ বেকারত্ব কমেছে—এই পরিসংখ্যানও প্রশ্নের মুখে তোলেন শমীক। তাঁর মতে, চপ ভাজা, চায়ের দোকান বা ছোটখাটো ব্যবসাকে মাইক্রো ইন্ডাস্ট্রির আওতায় এনে ইচ্ছামতো পরিসংখ্যান তৈরি করা হচ্ছে। অথচ বাস্তবে রাজ্য থেকে মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা উচ্চশিক্ষার জন্য ভিনরাজ্যে চলে যাচ্ছে, এবং লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক কাজের জন্য বাংলার বাইরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর শহিদ দিবসের সভাকেও কটাক্ষ করেন শমীক। তিনি বলেন, “ওই মঞ্চ আসলে শহিদদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য নয়, বিজেপিকে আক্রমণ করার জন্য ব্যবহার হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী এখন ভাষার রাজনীতি আঁকড়ে ধরেছেন, কারণ আর কোনও অস্ত্র নেই। অথচ, ২০১৮ সালে দাড়িভিটে ভাষার দাবিতে যে দুই ছাত্র শহিদ হয়েছিল, তাদের জন্য আজ পর্যন্ত কিছুই করেননি।”
শেষে পশ্চিমবঙ্গবাসীর উদ্দেশে শমীক ভট্টাচার্যের বার্তা ছিল, “আমাদের এই রাজ্যের মেধা আছে, সম্পদ আছে। আমরা গুজরাটের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারি। কিন্তু অভাব শুধু রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তির। সেই কারণেই এবার বাংলার মানুষ তৃণমূলকে বিদায় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই অশুভ শক্তিকে সরিয়ে রাজ্যকে মুক্ত করতে হবে।”