শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee)। ২০২২ সালের জুলাই মাসে গ্রেপ্তারির পর থেকে তিনি রয়েছেন জেল হেফাজতে। এই দীর্ঘ সময়ে ইডি ও সিবিআইয়ের দায়ের করা প্রায় সব মামলাতেই জামিন পেয়েছেন তিনি। তবুও এখনও মুক্তি পাননি। এবার জেল থেকে বেরতে মরিয়া প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী (Partha Chatterjee) আদালতে জানালেন, প্রয়োজনে নিজের হয়ে নিজেই লড়তে চান।
মঙ্গলবার আলিপুরের বিশেষ সিবিআই আদালতে ভার্চুয়াল শুনানিতে হাজির হন পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee)। বিচার প্রক্রিয়ার ধীরগতিতে ক্ষোভ উগরে দিয়ে তিনি বলেন, “বিচার প্রক্রিয়া যাতে দ্রুত শেষ হয়, তার জন্য দরকারে নিজের হয়ে নিজেই সওয়াল করব।” তাঁর অভিযোগ, আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণ প্রক্রিয়া ইচ্ছে করে টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, ফলে মুক্তি বিলম্বিত হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ সেপ্টেম্বর শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলার শেষ মামলাতেও কলকাতা হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছিলেন পার্থ (Partha Chatterjee)। কিন্তু, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আপাতত তিনি জেলে। গত ১৮ অগস্ট দেশের শীর্ষ আদালত জানায়, নিম্ন আদালতকে চার সপ্তাহের মধ্যে চার্জ গঠন করতে হবে এবং পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের জবানবন্দি নথিবদ্ধ করতে হবে। সেই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হওয়ার পরেই পার্থের মুক্তির পথ খুলবে।
পার্থ চট্টোপাধ্যায় এদিন আদালতে বলেন, “আমার কেসে (গ্রুপ সি) ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত সাক্ষ্য গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু, এখনও পর্যন্ত সেই প্রক্রিয়া চলছে না। আমি চাই, যত দ্রুত সম্ভব বিচার প্রক্রিয়া শেষ হোক।”
আইনি সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত কয়েকজন সাক্ষীর বক্তব্য নথিভুক্ত করা হলেও, মামলার মূল সাক্ষ্যগ্রহণের কাজ অনেকটাই বাকি। সেই ধীরগতিই প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর হতাশার মূল কারণ।
অন্যদিকে, সিবিআইয়ের আইনজীবীরা আদালতে জানিয়েছেন, সাক্ষ্যগ্রহণের কাজ চলছে নিয়ম মেনে এবং কোনও পক্ষপাত ছাড়াই। তদন্তকারী সংস্থার দাবি, “জরুরি সাক্ষ্যগুলো সম্পূর্ণ নথিবদ্ধ না হলে মামলা অপূর্ণ থেকে যাবে।”
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির এই মামলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায় প্রথম থেকেই নিজের নির্দোষিতা দাবি করে আসছেন। আগেও একাধিকবার আদালতে তিনি বলেছেন, “আমাকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার করা হয়েছে।” তবে এবার তাঁর স্বর আরও তীব্র। আদালতে প্রকাশ্যেই জানালেন, “আমি চাই দ্রুত বিচার হোক। আর যদি দরকার পড়ে, নিজের হয়ে নিজেই সওয়াল করব।”
রাজনৈতিক মহলে পার্থর এই মন্তব্যে নতুন চাঞ্চল্য। কেউ কেউ বলছেন, দীর্ঘদিনের নীরবতার পর নিজের মুক্তির লড়াইয়ে এবার সরাসরি মাঠে নামছেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী।
অন্যদিকে, রাজ্যের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, পার্থর এই বক্তব্য শুধুই আদালতের বার্তা নয়—এটি তাঁর আত্মরক্ষার লড়াইয়ের নতুন অধ্যায়।













