উল্টোডাঙার রাহুল দাস। মাত্র আঠারো বছর বয়স। স্বপ্ন ছিল একসময় ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বিদেশে চাকরি করার। সেই স্বপ্ন নিয়েই এগিয়েছিল সে। মাধ্যমিকে আইসিএসসি বোর্ড থেকে পেয়েছিল ৮৮ শতাংশ নম্বর। কিন্তু পরিবারের প্রতি দায়বদ্ধতা আর ভালোবাসা তাকে নিজের লক্ষ্য বদলাতে বাধ্য করে (Nicco Park)।
নিজের বাবা-মাকে একা ফেলে রেখে বিদেশে পাড়ি জমাতে মন চায়নি রাহুলের। তাই সিদ্ধান্ত নেয়, ইঞ্জিনিয়ার হবে না, কমার্স নিয়ে পড়বে। উচ্চমাধ্যমিকে ৮৯ শতাংশ নম্বর নিয়ে উত্তীর্ণ হয় সে। তারপর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএতে ভর্তি হয়। লক্ষ্য ছিল এমবিএ শেষ করে বাবার জামা-কাপড়ের পাইকারি ব্যবসার হাল ধরা, ব্যবসাটাকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেওয়া (Nicco Park)।
রাহুলের দাদু আশিস রঞ্জন ঘোষ বলছেন, “ছোট থেকেই খুব মেধাবী ছিল রাহুল। এক সময় বলতো, বাবার মতো এত পরিশ্রম করে ব্যবসা করতে পারব না। ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বিদেশে চলে যাব (Nicco Park)। কিন্তু মাধ্যমিকের পরে হঠাৎ নিজেই বলল— না, বাবা-মা একা হয়ে যাবে। আমি ওঁদের পাশে থাকব। বাবার ব্যবসা বড় করব। কিন্তু আজ… আজ সেই ছেলে ওঁদের একা ফেলে চলে গেল।”
বুধবার সকাল ১১টা নাগাদ বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে নিক্কো পার্কে (Nicco Park) ঘুরতে গিয়েছিল রাহুল। আনন্দের মুহূর্তে হঠাৎ কালো ছায়া। পার্কের ওয়াটার জোনে শাওয়ার নেওয়ার সময়েই আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। বন্ধুরা সঙ্গে সঙ্গেই তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। মাত্র আঠারোতেই জীবন থেমে গেল রাহুলের।
এই মর্মান্তিক ঘটনার পরেই পরিবারের তরফে প্রশ্ন তোলা হয়েছে নিক্কো পার্ক কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে। এত বড় ওয়াটার পার্ক, অথচ কি পর্যাপ্ত মেডিকেল সাপোর্ট ছিল? কতটা সচেতন ছিল কর্তৃপক্ষ? রাহুলের মৃত্যুকে ঘিরে ক্রমশই বাড়ছে চাপা ক্ষোভ।
রাহুলের বাবা সুরজিৎ দাস, যাঁর জামা-কাপড়ের পাইকারি ব্যবসা রয়েছে, বারবার বলছেন, “ছেলেকে কোনওদিন কোনও চাপ দিইনি। ও নিজের ইচ্ছেতেই ব্যবসা ধরতে চেয়েছিল। আমরা সবাই খুশিই ছিলাম… জানতাম, ও আমাদের গর্ব হবে। আজ সব শেষ। আমার সব স্বপ্ন, সব আনন্দ রাহুল নিয়ে চলে গেল।”
নিক্কো পার্কে এক দিনের আনন্দ ভ্রমণ যে এমন চিরতরের বেদনা হয়ে ফিরবে, তা কে ভেবেছিল! এক সম্ভাবনাময় তরুণের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে বাকরুদ্ধ পরিবার, শোকস্তব্ধ পরিচিত মহল।