যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের (Jadavpur University) সাম্প্রতিক ঘটনাবলী নিয়ে মুখ খুললেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী। একসময় তাঁর আমলেই ‘হোক কলরব’-এর মতো ঐতিহাসিক ছাত্র আন্দোলন (Jadavpur University) দেখেছিল বাংলা, যদিও তিনি এই আন্দোলনকে ব্যঙ্গ করে ‘জোক কলরব’ বলে অভিহিত করেছিলেন। এবারও বিশ্ববিদ্যালয়ের (Jadavpur University) পরিস্থিতি নিয়ে কড়া মন্তব্য করলেন তিনি।
অভিজিৎ চক্রবর্তীর দাবি, বর্তমান অস্থিরতার জন্য যাঁরা দায়ী, তাঁরা প্রকৃত ছাত্র নয়, বরং দুষ্কৃতী। তিনি বলেন, “ধারাবাহিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে একের পর এক বিশৃঙ্খলা তৈরি করা হচ্ছে। এটা কোনও সাধারণ ছাত্রদের কাজ নয়, এর পিছনে কোনো ‘পাকা মাথা’ রয়েছে। আইনের সাহায্য নিয়ে এদের মুখোশ খুলে দেওয়া উচিত।”
একসময় যাদবপুর ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক হয়েছিল, সেই প্রসঙ্গও টেনে আনেন তিনি। পুলিশি হস্তক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার পক্ষে সওয়াল করে তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আরও কঠোর হতে হবে। ভয় পেলে চলবে না, চাপের কাছে মাথা নত করা যাবে না। আইনের বিধান মেনেই এগোতে হবে। ২০১৪-১৫ সালে কলকাতা হাইকোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছিল, তা মানতে হবে। প্রয়োজনে পুলিশ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতেই পারে, এতে লজ্জার কিছু নেই।”
এই ধরনের ঘটনা যাদবপুরের জন্য নতুন কিছু নয়, সেটাও মনে করিয়ে দেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, “এই ধরনের পরিস্থিতি আগেও তৈরি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য থেকে শুরু করে বাবুল সুপ্রিয়, এমনকি রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। তাঁদের গাড়ি আটকে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে। এটা সীমাহীন স্পর্ধার পরিচয়। পুলিশের উচিত ছিল আগেই ব্যবস্থা নেওয়া।”
সম্প্রতি রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসুর বিরুদ্ধে হওয়া বিক্ষোভ নিয়েও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেন প্রাক্তন উপাচার্য। তিনি বলেন, “একজন মন্ত্রীকে শারীরিক নিগ্রহ করার অধিকার কারও নেই। মতপার্থক্য থাকতে পারে, কিন্তু তাই বলে গাড়িতে উঠে ভাঙচুর করা, ভয় দেখানো, চালক পালানোর চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে মামলা করা— এগুলো তালিবানি মানসিকতার পরিচয়। আমি এর তীব্র নিন্দা করি।”
র্যাগিং-কাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে এনে তিনি আরও বলেন, “পুলিশ ক্যাম্পাসে ঢুকতে গেলে ছাত্ররা বাধা দেয়। কিন্তু আমার চোখে ওরা ছাত্র নয়, দুষ্কৃতী। ভারতে আইন রয়েছে, যাদবপুরও ভারতের মধ্যেই পড়ে। তাই আইন মেনেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি নিয়ে এমন স্পষ্ট বক্তব্যে ফের বিতর্কের ঝড় উঠতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এখন দেখার, এই মন্তব্যের পর প্রশাসনের তরফে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়।