দুর্গাপুজো (Durga Puja) বাঙালির জীবনের রক্তে মিশে থাকা এক অনুভব। সাবেকি প্রতিমা, থিমের কারুকাজ, আলোর বাহার, বিসর্জনের কার্নিভাল— সব মিলিয়ে এই উৎসব এখন শুধু বাংলার নয়, বিশ্বের অন্যতম বড় সাংস্কৃতিক পরিচিতি। ইউনেস্কোর হেরিটেজ তকমা পাওয়ার পর সেই খ্যাতি আরও এক ধাপ এগিয়েছে। কিন্তু সেই পুজোতেই (Durga Puja) এবার বড়সড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত। এবার মহালয়ার আগেই কলকাতার তিনটি জনপ্রিয় পুজোয় ঠাকুর দেখতে হলে কাটতে হবে টিকিট! যা নিয়ে রীতিমতো চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে।
কলকাতার বালিগঞ্জ কালচারাল, দমদম পার্ক ভারত চক্র ও কেন্দুয়া শান্তি সঙ্ঘ— এই তিনটি নামজাদা পুজো মণ্ডপে ১৯, ২০ এবং ২১ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ মহালয়ার আগের দিনগুলোতে টিকিট কেটে (Durga Puja) ঠাকুর দেখতে হবে দর্শনার্থীদের। একজনের জন্য টিকিটের দাম ১০০ টাকা, দুই জনে ১৫০, তিন জনে ২০০ এবং চার জনে ৩০০ টাকা ধার্য করা হয়েছে। টিকিট কিনলে (Durga Puja) সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৩টে পর্যন্ত মণ্ডপে প্রবেশ করা যাবে। মিলবে ফাঁকা মণ্ডপে নিরিবিলি ঠাকুর দেখার সুযোগ, ছবি তোলার সুবিধা এবং ঠাকুরের থিম ও শিল্পকর্ম ভালোভাবে উপভোগ করার সময়।
এই সিদ্ধান্তের পেছনে যুক্তি দিচ্ছেন উদ্যোক্তারা। তাঁদের মতে, হেরিটেজ তকমা পাওয়ার পর দেশ-বিদেশ থেকে বহু দর্শনার্থী বাংলার পুজো (Durga Puja) দেখার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই বয়স্ক বা অসুস্থ, যারা ঠাকুর দেখতে চাইলেও ভিড় ঠেলে ঢুকতে পারেন না। আবার শিল্পপ্রেমীরা চাইলেও ঠিক করে প্রতিমা বা থিম দেখার সুযোগ পান না (Durga Puja)। সেই ভাবনাতেই এই ‘টিকিট দর্শন’-এর পরিকল্পনা। উদ্যোক্তা অঞ্জন উকিল বলেন, “এই পদক্ষেপে শিল্প ও দর্শনার্থীর মাঝে তৈরি হচ্ছে এক অনন্য সংযোগ।”
তবে অন্যমতও আছে। শহরের অন্য পুজো উদ্যোক্তা (Durga Puja) সজল ঘোষের কথায়, “এই ব্যবস্থায় বারোয়ারি পুজোর সার্বজনীন চরিত্রটাই মুছে যাবে। পুজো মানে তো সকলের জন্য উন্মুক্ত আনন্দ। সেখানে টিকিট? বিভেদ তৈরি হবে।”
শিল্পী সুশান্ত শিবানী পাল, যিনি তিনটি পুজোরই থিম ডিজাইনার, বলছেন, “এই উদ্যোগে পুজোর মূল সত্তা নষ্ট হবে না। বরং শিল্পটাকে আরও কাছ থেকে দেখার সুযোগ করে দিচ্ছে। এটি শুধুই মহালয়ার আগের কয়েকটি দিনের জন্য। পরে সবাই বিনামূল্যে দেখতেই পারবেন ঠাকুর।”
সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতিমধ্যেই বিষয়টি ঘিরে জোর বিতর্ক শুরু হয়েছে। অনেকেই বলছেন, “আগামী দিনে কি তাহলে টিকিট ছাড়া ঠাকুর দেখা অসম্ভব হয়ে যাবে?” কেউ আবার তুলনা করছেন বিদেশি ফেস্টিভ্যালের সঙ্গে, যেখানে প্রবেশমূল্য থাকাটাই স্বাভাবিক।