সকালের ছায়ায় ঘেরা ইকোপার্ক যেন সাক্ষী থেকেছে এক মানুষ হিসেবে দিলীপ ঘোষের (Dilip Ghosh) ভেতরের লড়াইয়ের। বাইরের কাঁটাছেড়া, বিতর্ক, কটাক্ষের ভিড়ে হারিয়ে যায় এক গভীর যন্ত্রণা— যা তিনি (Dilip Ghosh)বুকের মধ্যে চেপে রেখে এগিয়ে চলেছেন, রোজ সকালে, নীরবে। স্ত্রীর সন্তানের মৃত্যুর পরের দিনও তাঁকে (Dilip Ghosh) দেখা গেল ইকোপার্কে প্রাতঃভ্রমণ করতে।
বিয়ের ২৫ দিনের মাথায়, স্ত্রীর প্রথম পক্ষের পুত্র সৃঞ্জয় দাশগুপ্ত প্রয়াত হন। মাত্র ২৭ বছর বয়সে তাঁর পৃথিবী থেকে বিদায়। চারদিকে যখন দুঃখ, শোক ও বিতর্কের ছায়া, তখনও প্রাতঃভ্রমণে অবিচল দিলীপ ঘোষ। বিয়ের ঠিক পরের দিনই যেমন সকালের রোদে হাঁটতে বেরিয়েছিলেন, শোকের পরের দিনগুলিতেও তিনি ফিরেছেন নিজের চেনা রুটিনে।
মানসিক শক্তির এই ছবি শুধু রাজনৈতিক নয়, মানবিকও। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, এই অভ্যাসই তাঁকে ধাক্কা সামলে সামনে এগিয়ে চলার সাহস দিচ্ছে।
“কেউ চলে গেলে তো আর ফিরে আসে না। কিন্তু জীবন থেমে থাকে না,”— এমনই মত মনোবিদ অংশুমান দাসের। তিনি বলেন, “শোকের সময় মানুষ একা হয়ে গেলে, মানসিক অবসাদ আরও গভীর হয়। বরং যদি কেউ নিজের চেনা দৈনন্দিনতায় ফিরে যেতে পারেন, তাহলে মন অনেকটাই ভাল থাকে।”
আর সেই চেনা জীবনেই ফিরতে চাইছেন দিলীপ ঘোষ। দীর্ঘদিন ধরে রুটিন তাঁর সঙ্গী। সকাল হতেই ইকোপার্কে হাজিরা, শরীরচর্চা, প্রাণবন্ত রাজনৈতিক মন্তব্য— এ যেন তাঁর আত্মার রিচার্জিং প্রক্রিয়া।
“শরীরচর্চা করলে শরীরে এন্ডোরফিন নিঃসৃত হয়, যা মন ভাল রাখে।”— জানাচ্ছেন বিশিষ্ট মনোবিদ ড. জয়রঞ্জন রাম। বলেন, “অবসাদের সময়ে শরীরচর্চা অনেক বেশি দরকার। দুঃখে ডুবে থাকলে মন আরও ভেঙে পড়ে। কিন্তু হাঁটাচলা করলে, শরীর সক্রিয় থাকলে মনেও আশার আলো জ্বলে।”
আর সেই আলো জ্বালিয়ে রেখেছেন দিলীপ ঘোষ— নিজের মধ্যে, নিজের নিয়মে। তিনি একা নন, তাঁর এই যাত্রা তাঁদের জন্য অনুপ্রেরণা যারা আজ শোকের সঙ্গে লড়ছেন, হারিয়ে যাওয়া প্রিয়জনের স্মৃতিতে ভেঙে পড়ছেন।
দিলীপ ঘোষ আজ শুধু রাজনীতিবিদ নন, এক ভাঙা মনকে ধরে রাখার উদাহরণ।