চাকরিহারা গ্রুপ C ও গ্রুপ D কর্মীদের ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্তে বড় ধাক্কা খেল রাজ্য সরকার। কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court) এই সিদ্ধান্তে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করেছে। বিচারপতি অমৃতা সিনহা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজ্য কোনও ভাবেই এই ভাতা দিতে পারবে না।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের এসএসসি প্যানেল নিয়ে তৈরি হওয়া দুর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল হয়। শীর্ষ আদালতের (Calcutta High Court) নির্দেশ অনুযায়ী, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অনুরোধে কিছু ‘যোগ্য’ শিক্ষককে ২০২4 সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। তবে গ্রুপ C ও D কর্মীদের ক্ষেত্রে এই ছাড় প্রযোজ্য হয়নি। তাঁদের স্কুলে যোগ দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নেয় যে, চাকরিহারা গ্রুপ C কর্মীদের প্রতি মাসে ২৫ হাজার টাকা এবং গ্রুপ D কর্মীদের ২০ হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়া হবে। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে (Calcutta High Court) মামলা হয়। শুনানির সময় বিচারপতি অমৃতা সিনহা প্রশ্ন তোলেন, যাঁরা বসে রয়েছেন, তাঁরা কীভাবে শুধু বসে থেকেই রাজ্যের টাকা পাবেন? তিনি কটাক্ষ করে বলেন, “তাঁরা ঘরে বসে থাকবেন আর রাজ্য সরকার টাকা দেবে? একটার পর একটা রিভিউ পিটিশন চলতে থাকবে, আর রাজ্য এইভাবে ভাতা দিয়ে যাবে?”

শুক্রবার সেই মামলার শুনানিতে বিচারপতি (Calcutta High Court) স্পষ্ট নির্দেশ দেন, আপাতত কোনও ভাতা দেওয়া যাবে না। রাজ্যের নির্দেশিকাও খারিজ করে দেন তিনি।
এদিকে, এই রায়ের পর আবেদনকারীদের আইনজীবী ফিরদৌস শামিম বলেন, এই পুরো ভাতা প্রকল্প ছিল ‘পিঠ বাঁচানোর স্কিম’। তাঁর মতে, অনেক গ্রুপ C ও D কর্মী আছেন, যাঁরা সাদা খাতা জমা দিয়ে বা নিয়ম বহির্ভূতভাবে চাকরি পেয়েছিলেন। প্যানেলের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও তাঁরা চাকরি পেয়ে গিয়েছিলেন। এই কর্মীদের সিবিআই হেফাজতে নিয়ে জেরা করলে অনেক বড় চিত্র সামনে আসতে পারে। তাই তাঁদের মুখ বন্ধ রাখার জন্য ঘুরপথে টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ফিরদৌস শামিম আরও বলেন, “যাঁরা আজও রাস্তায় বসে রয়েছেন, যাঁরা প্রাপ্য হয়েও চাকরি পাননি, তাঁদের জন্য ভাতা নেই কেন? তাঁদের কণ্ঠস্বর চেপে রাখতেই কি এই টাকা বিলি হচ্ছিল?”
এই ঘটনার ফলে রাজ্য সরকারের উপর চাপ আরও বাড়ল। এখন দেখার বিষয়, ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়কালে সরকার কী অবস্থান নেয় এবং পরবর্তী শুনানিতে কী সিদ্ধান্ত আসে।