কারা যোগ্য, আর কারা অযোগ্য—সেই চিহ্নিতকরণ হল কীভাবে? রাজ্যের স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে ওঠা মামলায় এবার এই সরাসরি প্রশ্নই তুলে দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) বিচারপতি অমৃতা সিনহা। শুক্রবার ছিল মামলার গুরুত্বপূর্ণ শুনানি। বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, দুই হাজার পঁচিশ সালের নতুন নিয়ম বহু যোগ্য প্রার্থীকে এই নিয়োগপ্রক্রিয়া থেকে কার্যত বঞ্চিত করেছে। শুধু তাই নয়, নতুন নিয়মে যে বয়সের ছাড়ের কথা বলা হয়েছে, তার সুবিধা আদৌ কারা পাবেন, সেই নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন আদালত (Calcutta High Court)।
রাজ্যের তরফে দাবি করা হয়েছে, পুরো বিষয়টি আদালতের নজরেই করে নতুন নিয়ম আনা হয়েছে। তবে মামলাকারীদের আইনজীবীদের বক্তব্য, দুই হাজার ষোলো ও দুই হাজার উনিশ সালের নিয়োগপ্রক্রিয়ায় যে দুর্নীতি হয়েছিল, তার প্রকৃত সমাধান না করেই আবার নতুন নিয়মে ভুল পথে হাঁটছে কমিশন।
মামলাকারীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য ও ফিরদৌস শামিম আদালতে (Calcutta High Court) জানান, বহু যোগ্য প্রার্থী নতুন বিজ্ঞপ্তির নিয়মের ফলে বঞ্চিত হয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, নতুন নিয়ম কমিশন নিজেদের খেয়ালখুশি মতো তৈরি করেছে। অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে অতিরিক্ত নম্বর দেওয়ার একটি নিয়ম চালু করা হয়েছে, যা আগে ছিল না। এর ফলে যাঁরা আগে দুর্নীতির কারণে চাকরি পাননি, তাঁদের কোনও অভিজ্ঞতা নেই বলেই তাঁরা নতুন নিয়মে পিছিয়ে পড়ছেন। অথচ যাঁরা একসময় অনিয়মে চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁরাই আবার অভিজ্ঞতার জন্য বাড়তি নম্বর পাচ্ছেন—এতে স্পষ্ট বৈষম্য তৈরি হয়েছে বলে দাবি আইনজীবীদের ।
আরও অভিযোগ ওঠে, এখনও পর্যন্ত যোগ্য ও অযোগ্যদের কোনও পূর্ণ তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। ফলে দাগি অযোগ্যরাও নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিচ্ছেন। আইনজীবীদের দাবি, সাম্প্রতিক দুই বিজ্ঞপ্তি বেআইনি, সেগুলি বাতিল করে নতুন করে সম্পূর্ণ স্বচ্ছ নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হোক।
আদালতে জানানো হয়, শীর্ষ আদালতের স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে—কোনও দাগি অযোগ্য প্রার্থী কোনওভাবেই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবেন না। শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও সেই নিয়ম শিথিল হবে না।
আরও প্রশ্ন ওঠে, মাত্র এক দিনের ব্যবধানে কীভাবে শূন্যপদের সংখ্যা চূড়ান্ত করা হল, সেই ব্যাখ্যাও রাজ্যের তরফে স্পষ্ট নয় বলে দাবি করা হয়। এই প্রেক্ষিতেই বিচারপতি অমৃতা সিনহা রাজ্যের আইন আধিকারিকের উদ্দেশে প্রশ্ন তোলেন—নতুন নিয়ম বহু মানুষকে বঞ্চিত করেছে, তাহলে যোগ্যদের চিহ্নিত করা হল কীভাবে? বয়স ছাড়ের সুবিধাই বা কে পাচ্ছেন?
রাজ্যের তরফে বলা হয়, মামলাকারীরা নতুন বিজ্ঞপ্তিকে নিজেদের মতো করে ব্যাখ্যা করছেন। শীর্ষ আদালত ও হাইকোর্টের নির্দেশ মেনেই পুরো প্রক্রিয়া চালানো হয়েছে। পাশাপাশি জানানো হয়, নতুন নিয়মে ত্রুটি ধরা হলেও পুরনো দুই হাজার ষোলো বা দুই হাজার উনিশ সালের নিয়ম আর ফেরানো সম্ভব নয়। আগামী সোমবার ফের এই মামলার শুনানি হতে চলেছে।
এর আগে দুই হাজার পঁচিশ সালের ফল প্রকাশের পরই একাধিক অভিযোগ সামনে আসে। এমনকি দাগি প্রার্থীদেরও নথি যাচাইয়ের ডাকে নাম ওঠার অভিযোগ ওঠে। সেই নিয়েই হাইকোর্ট কড়া নির্দেশ দেয়, কোনও দাগি যেন পরীক্ষায় বসতেই না পারে। তবু অভিজ্ঞতার নম্বর, বয়সের হিসাব এবং অযোগ্যদের তালিকা—সব মিলিয়ে নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ ঘিরে ফের বড় প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হল রাজ্য জুড়ে।









