এসএসসি-র নতুন নিয়োগ বিধি নিয়ে দায়ের হওয়া মামলায় রাজ্য সরকারের পক্ষেই রায় দিল কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)। বিচারপতি সৌমেন সেন ও বিচারপতি স্মিতা দাসের ডিভিশন বেঞ্চ বুধবার স্পষ্ট জানিয়ে দিল, নিয়োগে রাজ্যের প্রস্তাবিত অতিরিক্ত ১০ নম্বরের ব্যবস্থা বৈধ। আদালত এও বলেছে, বয়সের ঊর্ধ্বসীমার ক্ষেত্রে রাজ্য যে ছাড়ের প্রস্তাব দিয়েছিল, তা-ও সংবিধান সম্মত (Calcutta High Court)।
এই রায়ের ফলে নিঃসন্দেহে স্বস্তিতে রাজ্য সরকার ও স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)। বিশেষ করে ২৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ বাতিল হয়ে যাওয়ার পর রাজ্যের নতুন নিয়োগ বিধিকে ঘিরে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল, তা এখন অনেকটাই কাটল বলে মনে করছে প্রশাসনিক মহল (Calcutta High Court)।
এই মামলায় মূল আপত্তি ছিল, কেন পূর্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে প্রার্থীদের অতিরিক্ত ১০ নম্বর দেওয়া হবে, এবং কেন শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে নম্বর কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। মামলাকারীদের অভিযোগ ছিল, এর ফলে বহু যোগ্য প্রার্থী বঞ্চিত হতে পারেন।
রাজ্যের পক্ষে আদালতে (Calcutta High Court) সওয়াল করেন অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত। এসএসসির পক্ষে ছিলেন প্রবীণ আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে, বঞ্চিত প্রার্থীদের হয়ে আদালতে সওয়াল করেন অনিন্দ্য মিত্র ও বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য।
ডিভিশন বেঞ্চ মামলাকারীদের সমস্ত দাবি খারিজ করে দিয়ে জানিয়ে দেয়, নিয়োগ সংক্রান্ত নতুন বিধি যথাযথ ভাবেই প্রণয়ন করা হয়েছে। সেই অনুযায়ীই ২০২৫ সালের পরীক্ষাগুলি নেওয়া হবে।
নতুন নিয়োগবিধিতে ৬০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষার বিধান রাখা হয়েছে, যা আগে ছিল ৫৫। শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে আগে যেখানে ৩৫ নম্বর পাওয়া যেত, তা কমিয়ে সর্বোচ্চ ১০ নম্বর করা হয়েছে। ইন্টারভিউ, শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা এবং ‘লেকচার ডেমনস্ট্রেশন’-এর উপর ১০ করে নম্বর বরাদ্দ করা হয়েছে। এই ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন তুলে মামলা হয়েছিল, কিন্তু আদালত সেই আবেদনও খারিজ করে দেয়।
এছাড়া নতুন বিধি অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারিতে যাঁদের বয়স ৪০ বছরের মধ্যে, তাঁরা পরীক্ষায় বসার সুযোগ পাবেন। এই বয়সছাড়কেও চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল। কিন্তু আদালত সেই প্রস্তাবকেও আইনসঙ্গত বলেই রায় দেয়।
উল্লেখযোগ্যভাবে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২০১৬ সালের চাকরিচ্যুতদের জন্য নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল এসএসসি। সেই নিয়োগ বিধিকে কেন্দ্র করেই এই মামলার সূত্রপাত হয়েছিল।
এসএসসির আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় রায়ের পর বলেন, “রাজ্য তার নিজের সিলেকশন প্রসেসের মাধ্যমে সেরা প্রার্থীকে নির্বাচন করবে। যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা রেখেছেন, তাঁরা অতিরিক্ত ১০ নম্বর পাবেন। নতুন প্রার্থীরা সেটা পাবেন না। সবাইকে মেধার ভিত্তিতেই নিয়োগ পরীক্ষায় বসতে হবে।”
এই রায় নিঃসন্দেহে রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে একটি বড় জয়, বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।