কলকাতার বাগবাজারে সারদা মায়ের স্মৃতিধন্য বাড়ি নিয়ে এবার চাঞ্চল্যকর অভিযোগ। বহুদিনের ইতিহাস, সংস্কৃতি আর ভক্তির নিদর্শন বহনকারী সেই জায়গায় প্রোমোটিংয়ের দৌরাত্ম্য চরমে পৌঁছেছে। পুরসভার চোখে ধুলো দিয়ে বাড়ির একাংশে গড়ে উঠছিল বহুতল ভবন। বহু অভিযোগ ও প্রতিবাদের পর অবশেষে হস্তক্ষেপ করল কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)। বিচারপতি সৌমেন সেন স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন—৩০ দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলতে হবে নির্মীয়মাণ ভবনের অবৈধ অংশ।
এই বাড়িটি শুধুমাত্র একটি বসতবাড়ি নয়—এটি জড়িয়ে রয়েছে শ্রীশ্রী সারদা মায়ের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সঙ্গে। কথিত আছে, একসময় তাঁর এক শিষ্য, চন্দ্র নামে, দারিদ্র্যে কাতর হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তখন মায়ের করুণ হৃদয় উদ্বেল হয়ে ওঠে। তিনি ওই শিষ্যকে নিজের বাড়ির একাংশ দান করে দেন। সেই চন্দ্রের বংশধর কার্তিক চন্দ্র দত্ত ছিলেন অকৃতদার (Calcutta High Court)। তাঁর মৃত্যুর পর থেকেই শুরু হয় বাড়ির দখল নিয়ে টানাপোড়েন। অভিযোগ, এক প্রোমোটার মৃত কার্তিকবাবুর অংশ জবরদখল করে নির্মাণ শুরু করে দেন, শরিকদের অনুমতি ছাড়াই (Calcutta High Court)।
ঘটনার আরও গভীরে গেলে জানা যায়, বাড়ির অপর অংশে এখনো বাস করেন সমীর দত্ত এবং তাঁর ভাই। তাঁদের অভিযোগ, মাত্র চার ফিট চওড়া একটি গলির মধ্যে কীভাবে পুরসভা তিনতলা নির্মাণের অনুমতি দিল, সেটাই প্রশ্নের। ২০২১ সালে প্রাথমিক অভিযোগের ভিত্তিতে পুরসভার আধিকারিকরা তদন্তে এলেও, তেমন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। বরং নির্বিচারে এগিয়ে চলে নির্মাণকাজ।
এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হন সুখ চাঁদ মিত্র নামে এক নাগরিক। আদালতে পুরসভার দেওয়া যাবতীয় রিপোর্ট খতিয়ে দেখে বিচারপতি সৌমেন সেন স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় গুরুত্ব থাকা সত্ত্বেও এই নির্মাণ আইনবিরুদ্ধ। তাই অবিলম্বে, আগামী ৩০ দিনের মধ্যে নির্মীয়মাণ অংশ ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়।
একটা বাড়ি নয়, এক টুকরো ইতিহাস বাঁচাতে শেষপর্যন্ত এগিয়ে এল বিচারবিভাগ। এখনও শেষ হয়নি লড়াই, কিন্তু এই রায় প্রোমোটার দৌরাত্ম্যের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক জয় বলেই মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।