প্রাথমিক শিক্ষকদের বিএলও (বুথ লেভেল অফিসার) হিসেবে নিযুক্তি নিয়ে চলা জল্পনার অবসান ঘটাল কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)। রাজ্যে এসআইআর (SIR) অর্থাৎ বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা প্রকল্পে প্রাথমিক শিক্ষকদের নিয়োগে আর কোনও আইনগত বাধা নেই বলেই জানিয়ে দিলেন বিচারপতি (Calcutta High Court) অমৃতা সিনহা। মামলাকারীদের তরফে তোলা আপত্তির ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় হস্তক্ষেপ করতে অস্বীকার করলেন আদালত।
সোমবার মামলার শুনানিতে বিচারপতি (Calcutta High Court) স্পষ্ট ভাষায় জানান, এই কাজের দায়িত্ব শিক্ষকদের ওপর অর্পণ করতেই পারে কমিশন, কারণ আইনে এমন কোনও বাধা নেই। তাঁর কথায়, “আইনে এই কাজ প্রাথমিক শিক্ষকদের উপরেই দেওয়া হয়েছে। দেশের মানুষ আপনাদের দিকেই তাকিয়ে আছে। তাই দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া চলবে না, কাজ আপনাদের করতেই হবে।”
উল্লেখ্য, বিহারে ইতিমধ্যেই সফলভাবে চালু হয়েছে এই এসআইআর প্রকল্প। সেখানে মৃত বা নিখোঁজ ভোটারদের নাম বাদ দিয়ে নতুন ভোটার তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এবার সেই কর্মসূচিই সারা দেশের মতো পশ্চিমবঙ্গেও চালু হতে চলেছে। সূত্রের খবর, নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যেই মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিককে এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত বিএলওদের কাজের পরিধি বা সময় নির্ধারিত হয়নি। তার আগেই কেন এই মামলা, সেই প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি (Calcutta High Court)।
মামলাকারীদের পক্ষ থেকে আইনজীবী সুবীর স্যানাল আদালতে বলেন, তাঁর মক্কেলরা সকলেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তাঁদের ওপর এই প্রকল্পে অংশগ্রহণের জন্য নিরবচ্ছিন্ন কাজের চাপ দেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিনের এই দায়িত্ব তাঁদের নিয়মিত বিদ্যালয়-কার্য থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ জানান। তিনি আরও বলেন, “ছুটির দিনেও এই কাজ চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাহলে কি ক্ষমতা থাকলেই যেকোনও দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়া যায়?”
অন্যদিকে, নির্বাচন কমিশনের তরফে আইনজীবী সৌম্য মজুমদার পাল্টা সওয়ালে বলেন, “সকল শিক্ষককে তো ডাকা হচ্ছে না। যেসব স্কুলে একজন মাত্র শিক্ষক রয়েছেন, তাঁদের এই কাজে যুক্তই করা হচ্ছে না। তাছাড়া এই সিদ্ধান্ত স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেই নেওয়া হচ্ছে।”
সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর বিচারপতি অমৃতা সিনহা মন্তব্য করেন, “আপনি তো কেবল আশঙ্কা করছেন যে আপনার ওপরেই সব দায়িত্ব পড়বে। এমন তো নয় যে সত্যিই আপনাকেই সব কাজ করতে বলা হয়েছে। আর রবিবার কাজ করতেই সমস্যা কোথায়?”
সবশেষে, এই মামলা নিষ্পত্তি করে দিয়ে হাইকোর্ট জানিয়ে দেয়, প্রাথমিক শিক্ষকরা এসআইআর সংক্রান্ত কাজে যুক্ত হতে পারবেন। বিএলও হিসেবে তাঁদের নিয়োগে কোনও বাধা নেই। ফলে নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্ত এখন থেকে আইনি বৈধতাও পেয়ে গেল।