আজ মঙ্গলবার বিধানসভায় বাংলা ভাষা নিয়ে বিশেষ আলোচনা ছিল। সকাল থেকেই পরিবেশ গরম হয়ে ওঠে। একদিকে জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে কটাক্ষ, অন্যদিকে ভারতীয় সেনা প্রসঙ্গ—সব মিলিয়ে শেষ পর্যন্ত তীব্র অশান্তিতে পৌঁছল অধিবেশন (Bratya Basu)।
প্রথমে আলোচনায় ওঠেন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তিনি বিজেপি নেতা অমিত মালব্যকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন। চন্দ্রিমা বলেন, “জাতীয় সঙ্গীত ‘জনগণমন’–কে ব্রাহ্ম মন্ত্র বলছেন তিনি, অথচ জানেনই না যে গানটি বাংলায় লেখা। স্বাধীনতার পর ১৯৫০ সালের ২৪ জানুয়ারি এই গানের প্রথম স্তবককে জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।” তিনি শুধু এখানেই থামেননি, দ্বিতীয় স্তবকও পাঠ করে শোনান। এরপর মালব্যকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “টুইট করার আগে একটু জেনে লিখতে হবে। না হলে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে।”
চন্দ্রিমার বক্তব্যের পর বিজেপির বিধায়ক অসীম সরকার কথা বলতে উঠতেই তৃণমূলের বিধায়করা হইচই শুরু করেন। তাঁরা একসঙ্গে স্লোগান দিতে থাকেন—“আমি বাংলার গান গাই।” এই পরিস্থিতির মাঝেই মঞ্চে আসেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তিনি বলেন, বাংলা ভাষা এবং বাঙালি সমাজকে বারবার অপমান করা হচ্ছে। তাঁর বক্তব্যের শেষ মুহূর্তে হঠাৎই তিনি সেনা প্রসঙ্গ টেনে আনেন।
ব্রাত্য বসু (Bratya Basu) বলেন, “সোমবার মেয়ো রোডে সেনাবাহিনী যেভাবে তৃণমূলের বাংলা ভাষার মঞ্চ ভেঙে দিল, ঠিক তেমনভাবেই ২৫ মার্চ ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনা বাংলাদেশকে হত্যা করেছিল।” এই মন্তব্য শোনার সঙ্গে সঙ্গেই বিজেপি বিধায়করা তীব্র প্রতিবাদে ফেটে পড়েন। শুভেন্দু অধিকারী চিৎকার করে বলতে থাকেন, “ইন্ডিয়ান আর্মি জিন্দাবাদ।” শোরগোল বাড়তে থাকায় ব্রাত্য বসুকে (Bratya Basu) তাঁর বক্তব্য মাঝপথেই থামাতে হয়।
অল্প সময়ের মধ্যেই দেখা যায় মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস গিয়ে স্পিকারের সঙ্গে কথা বলছেন। এরপরই স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন যে, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে দিনের জন্য সাসপেন্ড করা হচ্ছে। এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বিজেপির বিধায়করা স্লোগান দিতে দিতে সভা থেকে ওয়াক আউট করেন।
বাইরে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সামনে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “ব্রাত্য বসু ভারতীয় সেনাকে অপমান করেছেন। আমি তার প্রতিবাদ করেছি বলে আমাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।”
ফলে পরিষ্কার, বাংলা ভাষা নিয়ে যে আলোচনা শুরু হয়েছিল, তা শেষ পর্যন্ত গিয়ে থেমেছে ভারতীয় সেনা প্রসঙ্গ ও তীব্র রাজনৈতিক সংঘাতে। আজকের এই উত্তেজনা আগামী দিনে বাংলার রাজনীতিতে আরও বড় ঝড় তুলবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।