সংসদে ‘অপারেশন সিদুর’ নিয়ে আলোচনার আগেই কেন্দ্রীয় সরকার ও বিজেপিকে একহাত নিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। সোমবার সকালে দিল্লিগামী বিমান ধরার আগে কলকাতা বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন তিনি (Abhishek Banerjee)। পহেলগাঁও ইস্যুতে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দাগার পাশাপাশি বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর দেশের নানা রাজ্যে চলতে থাকা হেনস্থা নিয়েও গর্জে ওঠেন অভিষেক।
তিনি (Abhishek Banerjee) স্পষ্ট জানান, তৃণমূল কংগ্রেস বাংলার ভাষায় সংসদে নিজের বক্তব্য রাখবে। অপারেশন সিদুর নিয়ে আলোচনা থাকলেও, তিনি তাতেও বাংলা ভাষায় অংশ নেবেন বলে জানান। তাঁর কটাক্ষ, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, ওড়িশার মতো বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের অপমান ও নির্যাতন এখন নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে উঠেছে। বাংলা বলার কারণে আটকে রাখা, কাজে না নেওয়ার ঘটনা বেড়ে চলেছে বলেই অভিযোগ তাঁর (Abhishek Banerjee)।
এরপর নির্বাচন কমিশনকেও তুলোধোনা করেন অভিষেক ন। তাঁর অভিযোগ, এসআইআর (SIR) ইস্যুতে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ভয় ও বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। ভোটারদের অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। এমনকি “কুকুরের নামে ভোটার কার্ড” বানানোর কথাও তুলে ধরেন তিনি। বলেন, “একটা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলকে সুবিধা পাইয়ে দিতে এই সব করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের এমন পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ গণতন্ত্রের জন্য লজ্জাজনক।”
২০২১-এর শীতলকুচি ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “দিনের আলোয় মানুষকে গুলি করে মারা হয়েছিল, তা আজও ভোলেনি বাংলা।” তাঁর দাবি, ২০২৪ সালেও কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন একই রকম আচরণ করেছে। “চাটুকারিতা ও কৃতদাসত্ব”–এই দুটি শব্দেই কমিশনের ভূমিকা ব্যাখ্যা করেন অভিষেক।
এরপর বিজেপিকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করে তিনি বলেন, “বাংলায় কবে নির্বাচন হবে, তা নিয়ে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু বিজেপির এই নির্লজ্জ রাজনীতি আর সহ্য করা যায় না। যারা বাংলার ইতিহাস জানে না, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মস্থান জানে না, বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙে, তারা বাংলার সংস্কৃতিকে অপমান করছে।”
তিনি আরও বলেন, “এই রাজ্য এমন একটি জায়গা, যেখান থেকে চারজন নোবেলজয়ী এসেছেন—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মাদার টেরেসা, অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অমর্ত্য সেন। বাংলা এত কিছু দিয়েছে, অথচ বিজেপি বাংলাকে অপমান করছে। বাংলার মানুষ ২০২১ ও ২০২৪-এ শিক্ষা দিয়েছে, ২০২৬-এ আরও বড় শিক্ষা দিতে প্রস্তুত।”
বিভাজনের রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “গুজরাট, রাজস্থান, মহারাষ্ট্রে যা হচ্ছে, চাইলে আমরাও করতে পারি। কিন্তু সেটাই আমাদের রাজনীতি নয়। বাংলা বহুত্ববাদে বিশ্বাস করে। জঙ্গলমহলে বিজেপি ভাল ফল করলেও, সেখানে উন্নয়ন থামিয়ে দিইনি। বিজেপি বিভাজনের রাজনীতি করে, আমরা করি সমান উন্নয়নের রাজনীতি। দেশের সরকারেরও তো এই দৃষ্টিভঙ্গি হওয়া উচিত!”
শেষে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, “বিজেপি যদি ভাবে, বাংলার মানুষকে হেনস্থা করে, অপমান করে শিক্ষা দেবে, তাহলে ভুল করছে। বাংলা আরও কঠোর শিক্ষা দিতে প্রস্তুত। এই অপমান বরদাস্ত করা হবে না।”