দার্জিলিঙে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দুই ঘণ্টার বৈঠকের পরই ফের আলোচনার কেন্দ্রে প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় (Sovan Chaterjee)। শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করলেন, এনকেডিএ অর্থাৎ নিউটাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটির চেয়ারম্যান হচ্ছেন শোভন। প্রশাসনিক পদ পেলেও এই নিয়োগ ঘিরে শুরু হয়েছে নতুন রাজনৈতিক জল্পনা। অনেকেই বলছেন, এটি কেবল “চেয়ারম্যানশিপ” নয়, বরং রাজনীতিতে শোভনের কামব্যাকের সূচনা।
শোভন চট্টোপাধ্যায় (Sovan Chaterjee) ফোনে TV9 বাংলাকে বলেন, “মমতাদির আশীর্বাদ আমি পেয়েছি। আমি কৃতজ্ঞ, তাঁকে প্রণাম জানাই। মমতাদি আগেও আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। এবারও দিয়েছেন। তাঁর আস্থা রাখা, তাঁর নির্দেশ পালন করা আমার কর্তব্য।” তাঁর গলায় কৃতজ্ঞতার সুর স্পষ্ট।
একসময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ নেতা ছিলেন শোভন (Sovan Chaterjee)। কলকাতার মেয়র পদ থেকে শুরু করে রাজ্য মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও সামলেছেন তিনি। কিন্তু ২০২১-এর নির্বাচনের আগে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে বিজেপিতে যোগ দেন শোভন। দিল্লিতে গিয়ে প্রকাশ্যে পদ্মফুল হাতে নেন, কিন্তু সেই সম্পর্ক বেশিদিন টেকেনি। বিজেপির প্রতি ক্ষোভ বাড়তে থাকায় শেষমেশ দল ছাড়েন তিনি (Sovan Chaterjee)। তারপর থেকে রাজনীতির আঙিনা থেকে কার্যত নিখোঁজ ছিলেন।
তবে গুজব থামেনি। একুশের জুলাইয়ের মমতার সভায় তাঁকে দেখা যায় ২০২৩ ও ২০২৪— দু’বছরই। এমনকি ভাইফোঁটার দিনে মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়িতেও উপস্থিত ছিলেন শোভন (Sovan Chaterjee)ও বৈশাখী। শুধু মমতার সঙ্গেই নয়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও দেখা করেন তিনি। তখনই রাজনৈতিক মহলে কানাঘুষো— “তৃণমূলে শোভনের প্রত্যাবর্তন কি সময়ের অপেক্ষা?”
ঘটনাচক্রে, কলকাতায় অবৈধ নির্মাণ, পুরনো বাড়ি ভাঙার ঘটনা এবং পৌর প্রশাসনে দুর্বলতার সময় যখন মেয়র ফিরহাদ হাকিমের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল, তখনও শোভন ও অভিষেকের সাক্ষাৎ জল্পনা বাড়িয়েছিল।
এবার সেই জল্পনায় যেন সিলমোহর দিলেন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই। দার্জিলিঙে বৈঠকের দুই দিন পরেই মমতার ঘোষণা— শোভন চট্টোপাধ্যায় হচ্ছেন এনকেডিএ চেয়ারম্যান। রাজনীতিতে তাঁর “নতুন ইনিংস” শুরু হলো কিনা, এখন সেই দিকেই তাকিয়ে রাজ্য রাজনীতি।
বিজেপি অবশ্য এই নিয়োগকে কটাক্ষের চোখে দেখছে। বিজেপি নেতা রুদ্রনীল ঘোষ বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিদায়ের সময় আসছে। তাই যাওয়ার আগে পুরনো প্রিয়জনদের চেয়ার বিলি করছেন। শোভনও ব্যতিক্রম নন। বিদায়লগ্নে কাউকে ফাঁকা হাতে রাখা যায় না।”
রাজনৈতিক মহল বলছে, “চেয়ারম্যানশিপ” প্রশাসনিক পদ হলেও এর ইঙ্গিত স্পষ্ট— ২০২৬-এর নির্বাচনের আগে পুরনো সৈনিকদের ফের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে টানার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে।