ভারত সরকার শনিবার বাংলাদেশ(Bangladesh) থেকে আমদানি হওয়া কিছু পণ্যের ওপর নতুন বন্দর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। এর ফলে প্রস্তুত পোশাক ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য-সহ কয়েকটি পণ্য এখন নির্দিষ্ট বন্দর (Bangladesh) দিয়েই আমদানি করা যাবে। এই নির্দেশ জারি করেছে বাণিজ্য মন্ত্রকের অধীনস্থ ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড (DGFT)।
কোন কোন পণ্যে নিষেধাজ্ঞা?
প্রস্তুত পোশাক: শুধুমাত্র নাভা শেভা (মুম্বই) ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর দিয়ে আমদানি করা যাবে। সব ধরনের স্থলবন্দর দিয়ে পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ (Bangladesh)।
ফলমূল, কার্বনেটেড ও ফল-স্বাদযুক্ত পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য (যেমন স্ন্যাকস, বিস্কুট), প্লাস্টিক ও PVC পণ্যের তৈরি সামগ্রী, তুলা ও তুলার বর্জ্য, রং, প্লাস্টিসাইজার, দানা (গ্রানুল) ও কাঠের আসবাব: এই পণ্যগুলি এখন থেকে আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরাম-এর স্থল কাস্টমস স্টেশন (LCS) ও ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট (ICP) এবং পশ্চিমবঙ্গের চংড়াবান্ধা ও ফুলবাড়ি দিয়ে আমদানি করা যাবে না।
কোন পণ্য এই নিয়ন্ত্রণের বাইরে?
মাছ, তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস (LPG), ভোজ্যতেল ও পাথর ভাঙা চিপস আমদানির ক্ষেত্রে কোনও বিধিনিষেধ নেই। DGFT জানিয়েছে, এই নতুন বিধিনিষেধ আজ থেকেই কার্যকর এবং এটি বাংলাদেশ-সংক্রান্ত আমদানি নীতির পরিবর্তনের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
আগেই বন্ধ হয়েছে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা
এর আগে, ৯ এপ্রিল ভারত বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধাও বাতিল করে, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ নিজ পণ্য নেপাল ও ভুটান ছাড়া অন্যান্য দেশে ভারতের বন্দর ব্যবহার করে রপ্তানি করতে পারত। এই সিদ্ধান্তের পেছনে ছিল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনুসের চিন সফরের সময় দেওয়া বিতর্কিত মন্তব্য।
কী মন্তব্য করেছিলেন ইউনুস?
চীনে গিয়ে ইউনুস বলেছিলেন, “ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল সম্পূর্ণভাবে ল্যান্ডলকড” এবং বাংলাদেশই নাকি “ভারতের জন্য একমাত্র ভারত মহাসাগর অভিভাবক।” তিনি আরও বলেন, চীন চাইলে বাংলাদেশের ভৌগোলিক পথ ব্যবহার করতে পারে। এই মন্তব্যে ভারতের রাজনৈতিক মহলে ক্ষোভ ছড়ায়।
ভারতীয় রপ্তানিকারকদের অভিযোগ
ভারতের কিছু বস্ত্র শিল্প সংস্থা আগে থেকেই বাংলাদেশকে দেওয়া বিশেষ ছাড় (ছাড়পত্র ও ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা) বাতিল করার দাবি জানিয়েছিল, কারণ বাংলাদেশি পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল।
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক কিছুটা ঠান্ডা
সম্প্রতি দুই দেশের সম্পর্কে কিছুটা উষ্ণতা হ্রাস পেয়েছে, বিশেষত বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের (বিশেষ করে হিন্দুদের) ওপর হামলার ঘটনা নিয়ে দিল্লিতে উদ্বেগ বেড়েছে। ২০২৩–২৪ আর্থিক বছরে ভারত ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১২.৯ বিলিয়ন ডলার।
ভারত বাংলাদেশের কিছু পণ্যের আমদানির পথে কড়াকড়ি এনেছে। বাণিজ্যের পাশাপাশি ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রভাবও এই সিদ্ধান্তের পেছনে স্পষ্ট। এখন দেখার, এই নতুন নিয়মের ফলে দুই দেশের সম্পর্ক ও ব্যবসায়িক পরিস্থিতি কোন দিকে এগোয়।