ছাব্বিশের লোকসভা ভোট যত এগোচ্ছে, ততই বাঙালি অস্মিতা ও মাতৃভাষার ইস্যুকে অস্ত্র করে শান দিচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। ভাষা নিয়ে চরম বিতর্কের আগুনে রবিবার যেন আরও ঘি পড়ল (Prosenjit Chaterjee)। দিল্লি পুলিশের এক সরকারি চিঠিতে বাংলা ভাষাকে “বাংলাদেশি ভাষা” বলা হয়েছে—এই অভিযোগে উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব প্রতিবাদে গর্জে উঠেছেন। এবার সেই আন্দোলনের সুরেই গলা মেলালেন টলিউড সুপারস্টার প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় (Prosenjit Chaterjee)।
সোজাসাপটা ভাষায় প্রসেনজিৎ (Prosenjit Chaterjee) বলেন, “বাংলা ভাষা ছিল, আছে, আর থাকবে। তার জন্য লড়াই করতে হলে, আমরা সকলে একসঙ্গে লড়ব।” তাঁর এই মন্তব্য মুহূর্তেই ভাইরাল হতে শুরু করেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। নেটিজেনদের একাংশ বলছেন, অবশেষে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করলেন ‘বুম্বাদা’।
সম্প্রতি রাজ্যের শাসকদলের অভিযোগ, ভিনরাজ্যে কাজ করতে যাওয়া পরিযায়ী বাঙালি শ্রমিকদের বাংলা ভাষা বলার কারণে বাংলাদেশি বলে হেনস্থা করা হচ্ছে। শারীরিক নিগ্রহের পাশাপাশি তাঁদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে দিল্লি পুলিশ সম্প্রতি বঙ্গ ভবনে একটি চিঠি পাঠায়, যেখানে আটক ব্যক্তিদের কাছ থেকে পাওয়া নথি অনুবাদ করার জন্য “বাংলাদেশি ভাষা” বোঝে এমন একজন অনুবাদকের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়। তৃণমূল এই শব্দ চয়নকে বাংলার প্রতি চরম অবমাননা বলে অভিহিত করে।
তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ ও মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ইতিমধ্যেই নির্যাতিতদের সঙ্গে সাংবাদিক বৈঠকে অভিযোগের সত্যতা তুলে ধরেছেন। ২১ জুলাইয়ের সভা থেকেও মুখ্যমন্ত্রী এই ভাষা অবমাননার প্রসঙ্গ তুলে তীব্র ভাষায় কটাক্ষ করেন কেন্দ্রকে।
এই প্রেক্ষাপটেই আজ মুখ খুলেছেন প্রসেনজিৎ (Prosenjit Chaterjee)। বাংলার ভাষা নিয়ে কোনও আপস তিনি করতে নারাজ বলে জানিয়ে দিয়েছেন স্পষ্টভাবে।
তবে প্রসেনজিৎকে (Prosenjit Chaterjee) অতীতে একবার মাতৃভাষা নিয়ে বিতর্কের মুখে পড়তে হয়েছিল। মুম্বইয়ে একটি ছবির সাংবাদিক বৈঠকে এক বাঙালি সাংবাদিক বাংলায় প্রশ্ন করলে তিনি (Prosenjit Chaterjee) হেসে বলেছিলেন, “আপনার বাংলায় কথা বলার দরকার কী?” সেই মন্তব্য ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। পরে অভিনেতা স্পষ্ট করেন, তাঁর কথা ভুলভাবে তুলে ধরা হয়েছিল। মাতৃভাষার প্রতি অসম্মান করার কথা তিনি কল্পনাও করতে পারেন না। বরং ভাষার প্রতি দায়বদ্ধতা এবং ভালোবাসা নিয়েই তিনি বড় হয়েছেন—এটা তিনি বারবার বুঝিয়ে দিয়েছেন।
তৃণমূল এখন এই ইস্যুকে সামনে রেখে বাংলার সম্মান রক্ষার লড়াইয়ে নামছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। আর তারকাদের সরব হওয়া যে সেই লড়াইকে আরও তীব্র করে তুলবে, তা বলাই বাহুল্য।