নিউ ইয়র্কের মেয়র পদপ্রার্থী জোহরান মামদানি (Zohran Mamdani)-কে ঘিরে তীব্র বিতর্ক। ৯/১১ হামলার পর এক হিজাব পরা পিসি সাবওয়েতে উঠতে ভয় পেয়েছিলেন— এমন মন্তব্যের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে ঘিরে শুরু হয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া। একাংশের অভিযোগ, মামদানি সম্পূর্ণ গল্পটাই বানিয়ে বলেছেন ‘রাজনৈতিক সহানুভূতি’ পাওয়ার জন্য।
ঘটনার সূত্রপাত গত সপ্তাহে। এক আবেগঘন ভাষণে মামদানি (Zohran Mamdani) বলেন, “আমার পিসি ১১ সেপ্টেম্বরের পর থেকে সাবওয়েতে ওঠা বন্ধ করে দিয়েছিলেন, কারণ তিনি নিরাপদ মনে করতেন না। হিজাব পরে মানুষ তাঁকে কটাক্ষ করত। এই ভয় আজও মুসলিম নিউ ইয়র্কারদের মধ্যে রয়ে গিয়েছে।”
এই বক্তব্যেই আগুন জ্বলে ওঠে। বহু সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী দাবি করেন, মামদানির (Zohran Mamdani) একমাত্র পিসি মাসুমা মামদানি তখন তানজানিয়ায় থাকতেন— অর্থাৎ, নিউ ইয়র্কে সাবওয়ে চড়ার প্রশ্নই ওঠে না! এমনকি মাসুমার একটি ছবি ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে তাঁকে হিজাব ছাড়া দেখা যায়। এর পর থেকেই অভিযোগ ওঠে, মামদানি রাজনৈতিক সহানুভূতির জন্য মিথ্যে গল্প বানিয়েছেন।
একজন ব্যবহারকারী টুইট করেন, “জোহরান মামদানির (Zohran Mamdani) নকল ‘হিজাব পরা পিসি’র গল্প ওর মরিয়া রাজনীতির পরিচয় দেয়।” আরেকজন লেখেন, “এই লোকটা এত বোকা যে নিজের পিসি নিয়েই ভুল তথ্য ছড়িয়েছে। পুরো গল্পটাই মিথ্যে।”
চাপের মুখে সোমবার সাংবাদিক বৈঠকে এসে মামদানি বলেন, “আমি জেহরা ফুপি-র কথা বলেছিলাম, যিনি আমার বাবার কাজিন ছিলেন এবং কয়েক বছর আগে মারা গেছেন।” তিনি ব্যাখ্যা দেন, ‘ফুপি’ মানে উর্দু ও হিন্দিতে পিসি। তাঁর দাবি, বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে নাম নিয়ে।
কিন্তু ততক্ষণে সমালোচনার ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে মার্কিন রাজনীতিতে (Zohran Mamdani)। ৯/১১ হামলায় প্রাণ হারানো পরিবারের এক সদস্য টেরি স্ট্রাডা বলেন, “ওর (মামদানি) মন্তব্য ভয়ঙ্করভাবে সংবেদনহীন। আমাদের প্রিয়জনেরা সেদিন মারা গিয়েছিলেন, আর সে বলছে তার পিসি সাবওয়েতে অস্বস্তি বোধ করেছিল? এটা অপমান।”
অভিযোগের স্রোতে যোগ দেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে.ডি. ভ্যান্স। তিনি ব্যঙ্গ করে লেখেন, “জোহরানের মতে, ৯/১১-র আসল শিকার তার পিসি, যিনি সাবওয়েতে কিছু ‘খারাপ দৃষ্টি’ পেয়েছিলেন।”
৩৪ বছর বয়সি কুইন্স অ্যাসেম্বলিম্যান মামদানি সাম্প্রতিক সময়েই মুসলিম পরিচয়কে প্রকাশ্যে তুলে ধরছেন। প্রাক্তন গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমো ও রিপাবলিকান নেতা কার্টিস স্লিওয়া তাঁকে “গ্লোবাল জিহাদ” সমর্থনের অভিযোগে আক্রমণ করার পর থেকেই তিনি বলেছেন, “আমি মুসলমান পরিচয় নিয়ে গর্বিত, এবং ভয় দেখানো রাজনীতির বিরুদ্ধে লড়ব।”
কিন্তু বিতর্ক এখানেই শেষ হয়নি। কুওমো এক রেডিও সাক্ষাৎকারে তীব্র কটাক্ষ করে বলেন, “মামদানি বোধহয় খুশি হবেন, যদি আরেকটা ৯/১১ হয়।” এমনকি বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামসও বলেন, “নিউ ইয়র্ক ইউরোপ হতে পারে না,” যা ইসলামিক উগ্রতার ইঙ্গিত বলেই ধরে নিচ্ছে রাজনৈতিক মহল।
সব মিলিয়ে, এক ‘পিসি’র গল্প এখন নিউ ইয়র্কের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু। একদিকে সহানুভূতির আবেদন, অন্যদিকে মিথ্যার অভিযোগ— নির্বাচনের আগে মামদানির এই বিতর্কে কেঁপে উঠেছে মার্কিন রাজনৈতিক অঙ্গন।








