গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) পাকিস্তানকে ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ মঞ্জুর করেছে। এটি ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ (IMF) প্যাকেজের দ্বিতীয় কিস্তি। ভারতের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও এই অনুমোদন (IMF) দেওয়া হয়, যার ফলে দুই পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়ে। পরে হঠাৎ করেই মার্কিন নেতৃত্বে একটি যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসে (IMF)।
আইএমএফ-এর মতে, পাকিস্তান আর্থিক পুনরুদ্ধারে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে এবং তারা জলবায়ু ঝুঁকি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে সক্ষমতা বাড়াতে পাকিস্তানকে ভবিষ্যতে আরও ১.৪ বিলিয়ন ডলার দেবে বলে জানিয়েছে।
ভারতের আপত্তি কেন?
ভারত সরকার এই ঋণের সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করে দুটি প্রধান কারণ তুলে ধরে।
প্রথমত, পাকিস্তানের সংস্কার বাস্তবায়নের দুর্বল রেকর্ডের কথা উল্লেখ করে তারা এমন ঋণ কার্যকারিতার প্রশ্ন তোলে।
দ্বিতীয়ত, দিল্লির আশঙ্কা—এই অর্থ ব্যবহার করা হতে পারে “রাষ্ট্রীয় মদতপুষ্ট সীমান্তপারের সন্ত্রাসে”, যা পাকিস্তান বরাবরই অস্বীকার করে এসেছে।
ভারত আরও জানায়, আইএমএফ নিজেকে এবং দাতাদের “খ্যাতির ঝুঁকিতে” ফেলেছে এবং এটি আন্তর্জাতিক মূল্যবোধের প্রতি “উপহাস”।
পাকিস্তানের পুরনো অভ্যাস ও ভারতীয় প্রভাব সীমিত
বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরেই আর্থিক সংকটে পড়লেই আইএমএফের দ্বারস্থ হয়। ১৯৫৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ২৪ বার তারা এমন সহায়তা চেয়েছে। পাকিস্তানের প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রদূত হুসেইন হাক্কানি বলেন, “আইসিইউতে বারবার যাওয়া রোগীর মতো, এই পুনরাবৃত্তি মূল সমস্যা নয়—মূল সমস্যা কাঠামোগত দুর্বলতা।”
এদিকে, আইএমএফ বোর্ডে ভারতের প্রভাব সীমিত। ২৫ সদস্যের বোর্ডে ভারতের ভোটের হার মাত্র ২.৬%, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভোটের হার ১৬.৪৯%। তাছাড়া আইএমএফ নিয়ম অনুযায়ী, কোনো প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া যায় না—শুধু পক্ষে বা বিরত থাকা যায়।
‘সন্ত্রাসে অর্থ’ নিয়ে উদ্বেগ বাস্তব, কিন্তু কঠিন প্রমাণ
ভারতের অভিযোগ—এই ঋণ দিয়ে পাকিস্তান সীমান্তপারের সন্ত্রাস চালাতে পারে—বহু জটিল ও রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল। হাক্কানি বলেন, এ ধরনের অভিযোগ উত্থাপন করার সঠিক জায়গা হলো FATF (ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স), যেখানে সন্ত্রাস অর্থায়ন সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়। পাকিস্তান ২০২২ সালে FATF-এর গ্রে লিস্ট থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়, যার ফলে ঋণপ্রাপ্তিতে বাধা কমে যায়। হাক্কানির মতে, “আইএমএফ-এ স্ট্যান্ড নেওয়া কার্যকর নয়। যদি FATF-এ কোনো দেশ গ্রে বা ব্ল্যাক লিস্টে পড়ে, তখনই ঋণ পাওয়া কঠিন হয়।”
সংস্কারের ডাক, কিন্তু বিপদও আছে
ভারত চাইছে, আইএমএফে ভোটাধিকার যেন শুধুমাত্র অর্থনৈতিক অবদানের ভিত্তিতে না হয়। এই বিষয়ে ২০২৩ সালে ভারতের G20 প্রেসিডেন্সির সময় এন কে সিং এবং লরেন্স সামারস সংস্কার প্রস্তাব দেন। কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে, এই সংস্কার হলে চীন লাভবান হবে, ভারত নয়, এবং সেই কারণে ভারতে এমন দাবি তুললেও ভেবেচিন্তে চলতে হবে। কারণ অতীতে চীন ADB-এর ঋণ আটকে দিয়েছে ভারতের অরুণাচল প্রদেশে, সীমান্ত বিরোধের অজুহাতে।