মার্কিন আর্থিক দুনিয়ায় তোলপাড় (US Fraud Case)। ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন উদ্যোক্তা ব্যাংকিম ব্রহ্মভাট (Bankim Brahmbhatt)–এর বিরুদ্ধে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বিশাল ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের রিপোর্ট, ব্ল্যাকরকের প্রাইভেট ক্রেডিট আর্ম এবং HPS ইনভেস্টমেন্ট পার্টনার্সসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক বড় ঋণদাতা (US Fraud Case) হঠাৎই বুঝতে পারেন, তাঁদের দেওয়া অর্থ ভেসে গিয়েছে ‘চমকে দেওয়া প্রতারণা’র ফাঁদে। আর সবকিছুর কেন্দ্রেই রয়েছেন ব্রহ্মভাট, যিনি ব্রডব্যান্ড টেলিকম ও ব্রিজভয়েস নামে সংস্থার মালিক।
অভিযোগ, ব্রহ্মভাট ইচ্ছাকৃতভাবে নকল (US Fraud Case) গ্রাহকের নাম ও নকল পাওনাদারের খাতা তৈরি করেছিলেন। সেই তথাকথিত বকেয়া বিলকেই দেখানো হয় ঋণের জামানত হিসেবে। বহু মিলিয়ন ডলারের ঋণ এমন নকল আর্থিক কাগজের ওপর ভিত্তি করেই অনুমোদিত হয়। আদালতে ব্ল্যাকরক ও অন্যান্য ঋণদাতারা দাবি করেছেন, ব্রহ্মভাটের নেতৃত্বাধীন সংস্থাগুলি তাঁদের প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার পাওনা। তাঁর সংস্থার ওয়েবসাইটে এখনও দাবি, তারা নাকি বিশ্বজুড়ে টেলিকম কোম্পানিগুলিকে পরিষেবা ও অবকাঠামো সরবরাহ করে (US Fraud Case)।
ঘটনা আরও সংবেদনশীল কারণ, বছর খানেক আগেই প্রাইভেট–ক্রেডিট ব্যবসা সম্প্রসারণে HPS–কে অধিগ্রহণ করেছিল ব্ল্যাকরক (US Fraud Case। সেই সময়েই নাকি শুরু হয়েছিল বিপদ। মামলা সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্রহ্মভাটের সংস্থাগুলি হিসেবের খাতায় নিজেদের আর্থিক স্বাস্থ্য চকচকে করে দেখালেও, গোপনে অর্থ সরিয়ে নেওয়া হচ্ছিল ভারত ও মরিশাসে। ফরাসি ব্যাঙ্ক BNP Paribas–ও যুক্ত আছে ঋণের কাঠামোয়। ২০২০ সালে প্রথম ঋণ, ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত সেই ঋণের পরিমাণ গড়ে ওঠে প্রায় ৪৩০ মিলিয়ন ডলার। তার প্রায় অর্ধেকই নাকি BNP Paribas–এর অর্থ।
HPS প্রাথমিক ভাবে ডেলয়েটকে দিয়ে এলোমেলো গ্রাহক যাচাই করায়। পরে বার্ষিক অডিটে ছিলেন CBIZ। কিন্তু ২০২৫ সালের জুলাইয়ে আচমকাই সন্দেহ। HPS–এর এক কর্মী খেয়াল করেন, কয়েকটি ইমেল ঠিকানা অদ্ভুত। তদন্তে বেরোয়— যেসব ‘গ্রাহক’ থেকে ইমেল আসত বলে দাবি করা হচ্ছিল, সেগুলো আসলে ভুয়ো ডোমেইন! প্রকৃত টেলিকম কোম্পানির নাম নকল করে ফাঁদ পাতা হয়েছিল। আগের ইমেল–গুলিতেও একই ছাপ মিলেছে।
প্রথমে নাকি ব্রহ্মভাট ফোনে বলেছিলেন, “কোনও চিন্তা নেই।” তার পর থেকে তাঁর ফোন আর ধরেননি বলে জানানো হয়েছে। HPS–এর প্রতিনিধি নিউ ইয়র্কের গার্ডেন সিটির অফিসে গিয়ে দেখেন, তালাবন্ধ, ফাঁকা, জনমানবশূন্য— বহুদিন কেউ ঢোকেননি বলে জানিয়েছে পাশের অফিসের কর্মীরা।
১২ আগস্ট আকস্মিক ভাবে দেউলিয়া ঘোষণার আবেদন করেন ব্রহ্মভাট। একই দিন তাঁর টেলিকম সংস্থাগুলিও চ্যাপ্টার ১১–তে যায়। মার্কিন আইনে এটি সাধারণত পুনর্গঠনের সুরক্ষা। তিন দশকের টেলিকম অভিজ্ঞতার দাবিদার ব্যাংকিম ব্রহ্মভাট, ব্যাঙ্কাই গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা। কিন্তু অভিযোগ সামনে আসতেই তাঁর লিঙ্কডইন প্রোফাইল উধাও। বহু প্রশ্ন এখন আদালত ও তদন্তকারীদের সামনে— কীভাবে এত বড় আর্থিক প্রতারণা বহু বছর ধরে ধরা না পড়ে চলল? আর কোথায় গেল এই বিপুল অর্থ? বাজারের স্নায়ুর ওপর চাপ বাড়ছে, ঋণদাতারা মরিয়া তাঁদের অর্থ উদ্ধারে।
শুধু আমেরিকাতেই নয়, ভারতীয় ব্যবসায়ী মহলেও শোরগোল— আন্তর্জাতিক টেলিকম জগতে এত বড় জালিয়াতি, নাম জড়াল এক ভারতীয় বংশোদ্ভূতের। তদন্তে নিত্য নতুন তথ্য উঠে আসছে। আর পুরো ঘটনা যেন ব্যবসা জগতে এক প্রশ্নই ছুড়ে দিচ্ছে— ডিজিটাল দুনিয়ার হিসেব কি তবে এত সহজেই সাজানো যায়?





