মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি সৌদি আরবে সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার ( Ahmed al-Sharaa) (প্রাক্তন জিহাদি নেতা, যিনি একসময় পরিচিত ছিলেন আবু মুহাম্মদ আল-জোলানি নামে) সঙ্গে বৈঠক করেন। মাত্র ছয় মাস আগে আল-শারা ( Ahmed al-Sharaa) একটি বিদ্রোহের নেতৃত্বে ইরানপন্থী বাহিনী ও ৫০ বছরের আসাদ শাসনকে সরিয়ে দিয়ে নিজেকে দেশের নেতা হিসেবে ঘোষণা করেন ( Ahmed al-Sharaa) । আহমেদ আল-শারার ( Ahmed al-Sharaa) মাথার মূল্য বাইডেন সরকার ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ধার্য করেছিল। সেই জঙ্গি নেতার ( Ahmed al-Sharaa) সঙ্গে বৈঠকে বসলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সিএনএন-এর প্রতিবেদন অনুসারে, ট্রাম্প ও আল-শারার মধ্যে এই ঐতিহাসিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় রিয়াধে, যা ছিল গত ২৫ বছরে কোনো মার্কিন ও সিরিয়ান রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে প্রথম সাক্ষাৎ। বৈঠকের ছবি প্রকাশ করেছে হোয়াইট হাউস ও সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এই বৈঠকের ঠিক একদিন আগে ট্রাম্প সিরিয়ার ওপর দীর্ঘদিনের মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। এতে সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান উপস্থিত জনতার কাছ থেকে করতালিস ও উচ্ছ্বাস পান। ট্রাম্প বলেন, “আমি যা করছি, তা যুবরাজের জন্য।”
আল-শারার পরিচয় ও অতীত
২০১৩ সালে আল-শারাকে যুক্তরাষ্ট্র “বিশ্ব সন্ত্রাসী” তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে, কারণ তিনি সিরিয়ায় আল কায়েদার শাখা আল-নুসরা ফ্রন্টের প্রধান ছিলেন এবং আত্মঘাতী হামলার সংগঠক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি ইরাকে মার্কিন বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন, এরপর সিরিয়ায় গিয়ে ইসলামপন্থী বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন।
নতুন অর্থনৈতিক দিগন্ত
ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ফলে সিরিয়ার অর্থনীতিতে নতুন আশা দেখা দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়েছিল। এখন সৌদি আরব ও অন্যান্য উপসাগরীয় দেশগুলোর বিনিয়োগের পথ খুলে যেতে পারে।
ঘোষণার পর দেশজুড়ে আতশবাজি, বিলবোর্ডে ট্রাম্প ও যুবরাজের প্রতি কৃতজ্ঞতা, এবং লিরার মান ২৭% পর্যন্ত বাড়ার ঘটনা দেখা গেছে। সিরিয়ার বাণিজ্যমন্ত্রী সরাসরি সম্প্রচারে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “সিরিয়া এখন নতুন যুগে প্রবেশ করছে।”
নিরাপত্তা উদ্বেগ ও অভ্যন্তরীণ আশঙ্কা
তবে সবাই খুশি নয়। কেউ কেউ বলছেন, প্রাক্তন জিহাদিদের নেতৃত্বে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ। সিরিয়ার কিছু এলাকায় নারী ও শিশুদের নিধনের অভিযোগ উঠেছে। কিছু জায়গায় মানুষকে ধর্মীয় ও সামাজিক কারণে নির্যাতন করা হচ্ছে।
ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্পের এই পদক্ষেপে ইসরায়েল অসন্তুষ্ট। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ট্রাম্পকে বলেছিলেন যেন সিরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে না নেওয়া হয়। কিন্তু ট্রাম্প তা অগ্রাহ্য করেন এবং সিরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার ঘোষণা দেন।ইসরায়েল পরে সিরিয়ার বিভিন্ন এলাকায় হামলা চালিয়ে অস্ত্রভাণ্ডার ধ্বংস করে এবং কৌশলগত মাউন্ট হারমন পাহাড় দখল করে নেয়।