থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার (Thai-Cambodian War) রক্তাক্ত সীমান্ত সংঘাত নিয়ে সোমবার মালয়েশিয়ায় মুখোমুখি হচ্ছেন দুই দেশের শীর্ষ নেতৃত্ব। থাই সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, স্থানীয় সময় বিকেল ৩টায় (০৭০০ GMT) শুরু হবে মধ্যস্থতামূলক আলোচনা। থাইল্যান্ডের পক্ষে আলোচনায় নেতৃত্ব দেবেন ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম উইচায়াচাই। আলোচনার আয়োজক মালয়েশিয়া জানিয়েছে, কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত-ও আলোচনায় যোগ দিচ্ছেন (Thai-Cambodian War)।
মালয়েশিয়া বর্তমানে আসিয়ান (ASEAN) আঞ্চলিক সহযোগিতা ফোরামের সভাপতি দেশ এবং গত সপ্তাহেই দেশটির প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম দুই পক্ষকে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেন (Thai-Cambodian War)। এদিকে, শনিবার আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, দুই দেশই নাকি যুদ্ধবিরতির পথে এগোতে রাজি হয়েছে (Thai-Cambodian War)।
তবে মধ্যস্থতার আগেই পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। রবিবার পর্যন্ত উভয় পক্ষ একে অপরকে সীমান্তে নতুন করে গোলাবর্ষণ ও মাটির লড়াই শুরুর অভিযোগে বিদ্ধ করেছে (Thai-Cambodian War)। কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অভিযোগ, থাই সেনাবাহিনী রবিবার সকালে একাধিক স্থানে গোলা নিক্ষেপ করেছে, এমনকি ঐতিহাসিক মন্দির কমপ্লেক্সের দিকেও ভারী অস্ত্র ছোড়া হয়েছে।
থাই সেনাবাহিনী পাল্টা জানিয়েছে, রবিবার কম্বোডিয়ার সেনারা (Thai-Cambodian War) সাধারণ মানুষের ঘরের কাছাকাছি এলাকায় গুলি ছুড়েছে এবং লং-রেঞ্জ রকেট লঞ্চার প্রস্তুত রাখছে। থাই সেনাদের আশঙ্কা, আলোচনার ঠিক আগেই কম্বোডিয়া বৃহত্তর সামরিক আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে যাতে আলোচনা শুরু হওয়ার আগেই সর্বাধিক ক্ষতি সাধন করা যায়।
থাইল্যান্ডের সিসাকেত প্রদেশে রবিবার সারা দিন ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। সীমান্ত থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরের একটি সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কাঁচ ভেঙে যায়, দেওয়াল ধসে পড়ে ও বিদ্যুৎ সংযোগের তার বেরিয়ে পড়ে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, শনিবার ওই ক্লিনিকটি আর্টিলারি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যদিও তার আগেই পুরো এলাকা খালি করে দেওয়া হয়েছিল।
বাড়িঘর ফেলে পালিয়ে যাওয়া সাধারণ মানুষের মধ্যে কয়েকজন পুরুষ গ্রামে থেকে গিয়েছেন ঘর পাহারা দেওয়ার জন্য। নিজেরা মাটির নিচে খুঁড়ে অস্থায়ী বাঙ্কার বানিয়ে বসবাস করছেন, চারপাশে এখনও গুলির শব্দ অনবরত শোনা যাচ্ছে।
এখনও পর্যন্ত দুই দেশের সীমান্ত সংঘর্ষে মৃতের সংখ্যা ৩০ ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে থাইল্যান্ডে ১৩ জন বেসামরিক নাগরিক ও কম্বোডিয়ায় ৮ জন মারা গেছেন বলে জানিয়েছে প্রশাসন। প্রায় ২ লক্ষ মানুষকে ইতিমধ্যেই সীমান্ত এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
তবে দুই দেশের বিবাদ নতুন নয়। দীর্ঘ ৮১৭ কিলোমিটার সীমান্তে একাধিক অনির্ধারিত এলাকা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধ চলে আসছে। যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে প্রাচীন হিন্দু মন্দির টা মোয়ান থম ও ১১শ শতাব্দীর প্রেয়াহ ভিহেয়ার মন্দির। ১৯৬২ সালে আন্তর্জাতিক আদালত প্রেয়াহ ভিহেয়ারকে কম্বোডিয়ার অংশ হিসেবে ঘোষণা করে। তবে ২০০৮ সালে কম্বোডিয়া মন্দিরটিকে UNESCO ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করার চেষ্টা করলে ফের উত্তেজনা তৈরি হয়। এরপর কয়েক বছরের ছোটখাটো সংঘর্ষে অন্তত এক ডজনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
কম্বোডিয়া সম্প্রতি আবারও আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে এই সীমান্ত বিরোধ মেটাতে, যদিও থাইল্যান্ড জানিয়েছে তারা আদালতের এখতিয়ার মেনে নেয় না এবং দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান চায়।