প্যাসিফিক মহাসাগরের বুকে শান্ত জলে যখন স্প্ল্যাশডাউন করল ড্রাগন মহাকাশযান, সেই মুহূর্তে ভারতের বুক থেকেও নামল এক বিশাল চাপা উত্তেজনার ভার। দেশের প্রথম আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন যাত্রী, গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা (Shubhanshu shukla), সফলভাবে ফিরলেন তাঁর ঐতিহাসিক ১৮ দিনের মহাকাশ অভিযানের পর। এ যেন ভারতের মহাকাশ অভিযানের ইতিহাসে এক নতুন সূর্যোদয়ের দিন (Shubhanshu shukla)।
ভারতের ঘড়িতে তখন বিকেল ৩টা ১ মিনিট। সান ডিয়েগোর উপকূলে, স্পেসএক্সের ড্রাগন ক্যাপসুলে চড়ে সফলভাবে পৃথিবীর বুকে ফিরলেন শুভাংশু শুক্লা (Shubhanshu shukla), ইতিহাস গড়লেন—রাকেশ শর্মার ১৯৮৪ সালের মিশনের পর তিনিই হলেন দ্বিতীয় ভারতীয়, যিনি মহাকাশে পাড়ি দিলেন, এবং প্রথম যিনি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে থেকে কাজ করলেন।
এটি ছিল Axiom-4 বা Ax-4 নামের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক মহাকাশ মিশনের অংশ, যেখানে শুক্লর সঙ্গী ছিলেন কমান্ডার পেগি হুইটসন (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র), স্লাভোস উজনানস্কি (পোল্যান্ড) এবং টিবর কাপু (হাঙ্গেরি)। আইএসএস থেকে প্রায় ২২ ঘণ্টার দীর্ঘ প্রত্যাবর্তনের পর ড্রাগনের র-entry পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়ে প্রায় ২৭,০০০ কিমি/ঘণ্টা গতিতে। সেই সময় প্রবল তাপ ও জি-ফোর্সের মধ্য দিয়ে যেতে হয় মহাকাশচারীদের। শেষপর্যন্ত প্যারাশুট খোলার পর এক শান্তিপূর্ণ অবতরণ সম্পন্ন হয় মহাসাগরে।
ক্যালিফোর্নিয়ার আকাশে প্রতিধ্বনিত হল এক তীব্র সনিক বুম — ড্রাগনের পৃথিবীমুখী প্রবল গতির সাক্ষী। মুহূর্তের মধ্যেই জল ছুঁয়ে শেষ হল এক ইতিহাসের অধ্যায়। শুভাংশু শুক্লা (Shubhanshu shukla) শুধুই একজন মহাকাশচারী নন, তিনি ভারতের ভবিষ্যৎ ‘গগনযান’ মিশনের পথপ্রদর্শক। তাঁর এই মিশনে অংশগ্রহণ ভারতীয় মানব মহাকাশ অভিযানের ক্ষেত্রে এক বিশাল সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় পরিচালিত এই বাণিজ্যিক মিশনে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করে তিনি তুলে ধরেছেন দেশের বৈজ্ঞানিক ভাবনা, সাহসিকতা এবং প্রযুক্তির অগ্রগতি।
মহাকাশে অবস্থানকালে তিনি অংশ নেন একাধিক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় — জীববিদ্যা, উপাদান বিজ্ঞান থেকে শুরু করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পর্যন্ত। ‘Sprouts Project’-এ তাঁর অংশগ্রহণ, যেখানে মাইক্রোগ্র্যাভিটিতে উদ্ভিদের বৃদ্ধি বিশ্লেষণ করা হয়, ভবিষ্যতের মহাকাশ কৃষির সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে। তিনি কাজ করেছেন কোষের স্বাস্থ্য, পেশি ক্ষয় এবং স্বয়ংক্রিয় রোবোটিক্স সম্পর্কিত গবেষণায়ও — যা ভবিষ্যতের মহাকাশ যাত্রা ছাড়াও পৃথিবীর চিকিৎসা বিজ্ঞানের দিকেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
তাঁর মাধুর্যপূর্ণ আচরণ, পেশাদারিত্ব ও ভারতের হয়ে গর্বজনক প্রতিনিধিত্ব আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসা কুড়িয়েছে। মিশনের কমান্ডার পেগি হুইটসন প্রশংসা করে বলেছেন, শুভাংশুর পেশাগত মনোভাব ও অভিযানে মানিয়ে নেওয়ার দক্ষতা তাঁর প্রথম স্পেসফ্লাইটে এক কথায় অসাধারণ।
এ এক জাতীয় গর্বের মুহূর্ত—ভারতীয় তেরঙ্গা এবার মহাশূন্যে শুধুই ওড়ে না, তা গবেষণার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ গড়ার পথও দেখায়।