চীনের তিয়ানজিন শহরে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (SCO) সম্মেলনের ফাঁকে মুখোমুখি বসলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (PM Modi) এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। দুই দেশের দীর্ঘদিনের টানাপোড়েনের পর এই বৈঠককে ঘিরে দারুণ কৌতূহল তৈরি হয়েছে। শুরুতেই দুই নেতা করমর্দন করেন—যা আসলে শুধু সৌজন্য নয়, বরং ভবিষ্যতের সম্পর্ককে এগিয়ে নেওয়ার এক বড়ো বার্তা (PM Modi) । একইসঙ্গে এটি ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্দেশেও এক কূটনৈতিক সংকেত, যিনি ভারত ও চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছেন।
এক ঘণ্টার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মোদী (PM Modi) স্পষ্ট করে দেন, ভারত-চীন সম্পর্ক এগোতে হলে পারস্পরিক বিশ্বাস, সম্মান এবং সংবেদনশীলতার ভিত্তিতে এগোতে হবে। তিনি (PM Modi) জানান, “দুই দেশের ২.৮ বিলিয়ন মানুষের ভবিষ্যৎ একে অপরের সহযোগিতার সঙ্গে জড়িত। শুধু ভারত ও চীন নয়, গোটা মানবজাতির কল্যাণও এর সঙ্গে যুক্ত।”
মোদী (PM Modi) আরও বলেন, সীমান্ত সমস্যা নিয়ে বিশেষ প্রতিনিধি পর্যায়ে আলোচনার অগ্রগতি, কৈলাশ মানসসরোবর যাত্রা ফের শুরু হওয়া, এবং দুই দেশের মধ্যে বিমান চলাচল পুনরায় চালু হওয়া—এসবই ইতিবাচক দিক।
অন্যদিকে শি জিনপিং ভারতকে ‘চীনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “চীন ও ভারত দুই প্রাচীন সভ্যতার দেশ। আমরা বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ। তাই দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সম্পর্ক সামলানো জরুরি। ড্রাগন আর হাতি যখন একসঙ্গে চলবে, তখন গোটা বিশ্বে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।”
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে উহানে শেষবার চীন সফরে গিয়েছিলেন মোদী। ডোকলাম সংঘাতের পর সেই সফর ছিল সম্পর্ক মেরামতির চেষ্টা। কিন্তু ২০২০ সালে গালওয়ান সংঘর্ষে সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছায়। দু’দেশের নেতারা দীর্ঘদিন একে অপরকে এড়িয়ে গিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক মঞ্চে। অবশেষে গত বছর রাশিয়ায় ব্রিকস সম্মেলনে মুখোমুখি হওয়ার পর ধীরে ধীরে সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
এবারের বৈঠকের পেছনে আরেকটি বড়ো কারণ হল আমেরিকার সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অবনতি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়ে দিয়েছে, কারণ ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করেনি। অন্যদিকে, চীনের সঙ্গেও ট্রাম্পের দ্বন্দ্ব তীব্র। সম্প্রতি তিনি হুমকি দিয়েছেন, বিরল মাটির চুম্বকের রপ্তানি বন্ধ হলে চীনের উপর ২০০ শতাংশ শুল্ক বসাবেন। ফলে ট্রাম্পের এই বাণিজ্যযুদ্ধ ভারত, চীন, রাশিয়াকে একসঙ্গে টেনে আনছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
চীন ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে বলেছে, তারা ভারতের পাশে আছে এবং আমেরিকার চাপকে ‘বুলিং’ বা দাদাগিরি হিসেবে নিন্দা করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই নীতি আমেরিকার সেই কূটনৈতিক কৌশলকেই নস্যাৎ করছে, যেখানে ভারতকে চীনের পাল্টা ভারসাম্য হিসেবে ব্যবহার করা হতো।