ভারতীয় সেনার ‘অপারেশন সিনদুর’-এ মে মাসে ধ্বংস হওয়া সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটি ও প্রশিক্ষণ শিবিরগুলি ফের তৈরি করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পাকিস্তান (Pakistan)। গোপন সূত্রে জানা গিয়েছে, পাকিস্তানের (Pakistan) সেনা, গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এবং সরকার মিলে এই সন্ত্রাসবাদী পরিকাঠামো পুনর্গঠনের জন্য বিপুল অর্থ ও সম্পূর্ণ সহায়তা দিচ্ছে। বিশেষ করে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর (PoK) এবং সংলগ্ন অঞ্চলে এই কাজ তীব্র গতিতে চলছে।
গত ৭ মে ভারতীয় সেনা ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর আওতায় পাকিস্তান ও PoK-এর মধ্যে থাকা ৯টি বড় সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিতে নিখুঁত এয়ারস্ট্রাইক চালায় (Pakistan)। এই অভিযান ছিল জইশ-ই-মহম্মদ (JeM), লস্কর-ই-তইবা (LeT) ও হিজবুল মুজাহিদিনের মতো তিনটি প্রধান জঙ্গি সংগঠনের বিরুদ্ধে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য লক্ষ্য ছিল বাহাওয়ালপুরে অবস্থিত জইশ-ই-মহম্মদের সদর দফতর, যা সংগঠনের প্রধান অপারেশনাল কেন্দ্র বলে ধরা হয়।
গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী, আইএসআই (Pakistan) এখন নতুন কৌশল নিচ্ছে—বড় সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটি নয়, বরং লাইন অফ কন্ট্রোল (LoC)-এর জঙ্গলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছোট ছোট ‘হাই-টেক’ ক্যাম্প তৈরি করছে। এতে করে তারা সহজে নজরদারি এড়াতে পারবে এবং এয়ারস্ট্রাইকের মতো হামলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এই ক্যাম্পগুলি তৈরি হচ্ছে লুনি, পুটওয়াল, টাইপু পোস্ট, জামিলা পোস্ট, উমরানওয়ালি, চাপরার, ফরওয়ার্ড কাহুটা, ছোটা চক এবং জংলোরা অঞ্চলে। এখানে বসানো হচ্ছে উন্নত প্রযুক্তির নিরাপত্তা ব্যবস্থা, যেমন থার্মাল ইমেজার-বিরোধী কভার, পাতাঝরা বনের মধ্যে রাডার প্রতিরোধী ছাউনি এবং উপগ্রহ নজরদারি ঠেকানোর বিশেষ প্রযুক্তি।
পাশাপাশি PoK-তে ধ্বংস হওয়া ১৩টি লঞ্চপ্যাড নতুন করে তৈরি করছে পাকিস্তানি সেনা ও আইএসআই। এর মধ্যে রয়েছে কেল, শারদি, দুধনিয়াল, আথমুকাম, জুরা, লিপা ভ্যালি, পচিবন চমন, টান্ডপানি, নাইয়ালি, জানকোট, চাকোটি, নিকাইল এবং ফরওয়ার্ড কাহুটা।
এছাড়া জম্মু সেক্টরের আন্তর্জাতিক সীমান্তে থাকা চারটি লঞ্চপ্যাড, যেগুলি অপারেশন সিনদুরে ধ্বংস হয়েছিল, সেগুলিও পুনরায় সক্রিয় করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে মাসরুর বড়া ভাই, চাপরার, লুনি ও শাকরগড়ে একটি ড্রোন সেন্টার। বিশেষভাবে নজরদারির জন্য নিয়োগ করা হচ্ছে পাক সেনার বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত রক্ষীরা, যারা থাকবে থার্মাল সেন্সর, লো-ফ্রিকোয়েন্সি রাডার এবং অ্যান্টি-ড্রোন প্রযুক্তি দিয়ে সজ্জিত।
ভারতীয় গোয়েন্দারা সম্প্রতি বাহাওয়ালপুরে একটি গোপন উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের ইঙ্গিত পেয়েছে। সেখানে জইশ-ই-মহম্মদ, লস্কর-ই-তইবা, হিজবুল মুজাহিদিন এবং দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (TRF)-এর শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। TRF-ই এপ্রিলের পাহালগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসবাদী হামলার মূল চক্রী, যেখানে ২৬ জন নিহত হন।
এই বৈঠকে আইএসআই আশ্বাস দেয় যে ধ্বংস হওয়া পরিকাঠামো পুনর্গঠনে তারা বিপুল অর্থ ও জনবল দেবে। এখন সেই মর্মেই কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, ইতিমধ্যেই বহু জায়গায় মেরামত চলছে এবং আরও সুরক্ষিত ক্যাম্প তৈরির চেষ্টা চলছে।