পাকিস্তানের সাংসদ (Pakistan)ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির শীর্ষস্থানীয় নেত্রী শেরি রেহমান সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এখন পাকিস্তান এক ‘পরিবর্তিত দেশ’। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে এক উত্তপ্ত বিতর্কে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, “পাকিস্তান (Pakistan) সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে লড়ছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের প্রচার যুদ্ধ আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে।”
ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পরিপ্রেক্ষিতে গোটা বিশ্বে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে পাকিস্তানও (Pakistan) শুরু করেছে কূটনৈতিক প্রচার অভিযান। এরই অংশ হিসেবে শেরি রেহমানের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ব্রাসেলস সফরে গিয়েছে। উদ্দেশ্য—পাকিস্তানের বক্তব্য তুলে ধরা এবং ভারতের ‘প্রচারণা’কে মোকাবিলা করা।
এক চাঞ্চল্যকর সাক্ষাৎকারে শেরি রেহমানকে জিজ্ঞেস করা হয়, কেন পাকিস্তান (Pakistan) আজও জৈশ-ই-মহম্মদ, হাক্কানি নেটওয়ার্ক এবং আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট ব্রিগেড ৩১৩-এর মতো জঙ্গি গোষ্ঠীগুলিকে আশ্রয় দিয়ে চলেছে। উত্তরে রেহমান ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “আমি কি প্রতিবার ভারতে হামলা হলে যুদ্ধ করতে যাব? ভারতে তো শতাধিক বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন চলছে। ওদের দোষও কি আমরা নেব?”
যখন হাকিম (Pakistan ) উল্লেখ করেন, ব্রিগেড ৩১৩ আসলে একাধিক জঙ্গি গোষ্ঠীর মিলিত রূপ, তখন রেহমান তা নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, “কে আপনাকে এসব বলেছে? আমিও চাইলে অসংখ্য নথি দেখাতে পারি। দরকার হলে আমরাও একটা ডিজিটাল ডোজিয়ার তৈরি করব।” তাঁর এই মন্তব্যের মাধ্যমে ভারতের প্রমাণভিত্তিক সন্ত্রাসবাদ সংক্রান্ত ডোজিয়ারের প্রতি কটাক্ষ করা হয়।
সাক্ষাৎকারে রেহমান অভিযোগ করেন, “আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের বড় একটা অংশ ভারতের দৃষ্টিকোণ থেকেই প্রতিবেদন তৈরি করে। আমরা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছি।”
এছাড়া আলোচনায় উঠে আসে ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (FATF)-এর গ্রে-লিস্ট থেকে পাকিস্তানের সাম্প্রতিক অব্যাহতির প্রসঙ্গ। হাকিম যখন বলেন, ২০২২ পর্যন্ত পাকিস্তান FATF-এর গ্রে-লিস্টে ছিল সন্ত্রাসে অর্থ জোগানোর অভিযোগে, তখন রেহমান দাবি করেন, “আমরা ২৬৪৫টি সন্ত্রাস অর্থায়ন মামলায় অভিযোগ দায়ের করেছি। তাই তো আজ আমরা গ্রে-লিস্টে নয়, হোয়াইট-লিস্টে রয়েছি।”

তিনি আরও জানান, পাকিস্তানের মুরিদকে ও বাহাওয়ালপুরের মতো জায়গায় যে সব সংগঠন আগে সক্রিয় ছিল, তারা এখন নিষিদ্ধ। প্রায় ২০০০ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
ভারতকে FATF-এর গ্রে-লিস্টে না রাখার বিষয়েও প্রশ্ন ওঠে। জবাবে রেহমান বলেন, “এটা আমাদের কূটনৈতিক ব্যর্থতা।” এরপরই তিনি কুলভূষণ যাদবের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন, যাকে পাকিস্তান একজন ভারতীয় গুপ্তচর হিসেবে দাবি করে।
তালিবান যখন কাবুল দখল করেছিল, সেই দিন পাকিস্তানের তৎকালীন ISI প্রধানের সেখানে উপস্থিতি নিয়েও প্রশ্ন করেন হাকিম। জবাবে রেহমান বলেন, “আমরা আফগানিস্তানের সঙ্গে এক ধরনের রোলিং ডোর সম্পর্ক বজায় রাখি। পাকিস্তান বদলাচ্ছে, আমরা সত্যিই চেষ্টা করছি।”
জইশ-ই-মহম্মদের নেতা মাসুদ আজহারের পরিবারের সদস্যদের ভারতীয় বায়ুসেনার হামলায় মৃত্যুর খবর নিয়েও প্রশ্ন করা হয়। রেহমান বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে রাজি হননি। বলেন, “শিশুরা তো নেতা নয়। ওখানে হাসপাতাল, মসজিদ ও ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। চাইলে আমি নিজেই আপনাকে সেখানে নিয়ে যেতে পারি।”