বুধবার সকাল থেকে হঠাৎ করেই সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে ভয়ঙ্কর এক গুজব। দাবি করা হয়, পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী Imran Khanকে নাকি সেনা হেফাজতে খুন করা হয়েছে। আরও চাঞ্চল্যকর দাবি ওঠে, তাঁর দেহ নাকি সরিয়ে ফেলা হয়েছে রাওয়ালপিণ্ডির Adiala Jail থেকে। এই দাবি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে একাধিক প্ল্যাটফর্মে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে যায়।
আফগানিস্তান টাইমস নামে একটি সংবাদমাধ্যম দাবি করে, পাকিস্তানের ‘বিশ্বস্ত সূত্র’ থেকে তারা এই তথ্য পেয়েছে। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ দলের চেয়ারম্যান ইমরান খানকে (Imran Khan) রহস্যজনকভাবে হত্যা করা হয়েছে এবং তাঁর দেহ জেল থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে এই দাবির পক্ষে কোনও শক্ত প্রমাণ এখনও সামনে আসেনি। পাকিস্তানের প্রথম সারির সংবাদমাধ্যমগুলিও এই খবরের কোনও সত্যতা নিশ্চিত করেনি। খোদ ইমরানের দল Pakistan Tehreek-e-Insaf-এর তরফ থেকেও কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি।
গুজবের জেরেই এদিন সন্ধ্যায় আদিয়ালা জেলের বাইরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে (Imran Khan)। ইমরানের তিন বোন আলিমা, উজমা ও নোরিন খান তাঁর সঙ্গে দেখা করার দাবিতে জেলের বাইরে বিক্ষোভে বসেন। তাঁদের সঙ্গে জড়ো হন বহু পিটিআই সমর্থকও। বিক্ষোভকারীরা জেলের দিকে মিছিল করে এগোতে গেলে পুলিশ ব্যারিকেড ফেলে তাদের আটকে দেয়। পরিস্থিতি তখন কার্যত অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে।
জানা গিয়েছে, কয়েক দিন আগেই ইমরানের (Imran Khan) বোনদের জেলে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। তখন তাঁদের সাময়িকভাবে আটকও করা হয়। সেই ঘটনার পর থেকেই ইমরান খানের সম্পূর্ণ নিঃসঙ্গ অবস্থান নিয়ে আরও বেশি উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। সমর্থকদের দাবি, ইচ্ছাকৃতভাবেই তাঁকে পরিবারের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হচ্ছে।
২০২২ সালে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই একের পর এক মামলায় জর্জরিত ইমরান খান (Imran Khan)। দুর্নীতি থেকে আদালত অবমাননা—একাধিক অভিযোগে তাঁকে জেলবন্দি করে রাখা হয়েছে। তাঁর দল ও সমর্থকদের দাবি, সব মামলাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, তাঁকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতেই এই ষড়যন্ত্র।
এই প্রথম নয়, আগেও ইমরানের মৃত্যুর গুজব ছড়িয়েছে একাধিকবার, পরে যা সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। তবুও প্রতিবারই এই ধরনের গুজব পাকিস্তানের রাজনীতিতে তীব্র অস্থিরতা তৈরি করছে।
এদিন আদিয়ালা রোডে বসা অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দেন পিটিআই-এর শীর্ষ নেতারাও। তাঁদের মধ্যে ছিলেন ব্যারিস্টার গওহর আলি খান ও সালমান আকরাম রাজা। পুলিশের সঙ্গে আলোচনার পর শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ তুলে নেওয়া হয়। সালমান রাজা বলেন, তাঁরা নিরস্ত্র, কিন্তু নীতির শক্তিতেই লড়াই চালিয়ে যাবেন। জনগণের চাপেই একদিন মুক্তি পাবেন ইমরান খান (Imran Khan)—এই বিশ্বাসই তাঁদের শক্তি।
আরও একধাপ এগিয়ে কড়া হুঁশিয়ারি দেন সংবিধান রক্ষা মঞ্চের উপ চেয়ারম্যান আল্লামা রাজা নাসির আব্বাস। তিনি বলেন, ধৈর্যের বাঁধ ভাঙলে দেশজুড়ে বিপ্লব শুরু হবে। তখন আর ইমরানের সঙ্গে দেখা করার সুযোগও পাওয়া যাবে না, এমনটাই তাঁর দাবি।
সব মিলিয়ে, ইমরান খানের মৃত্যু নিয়ে ছড়ানো গুজব সত্য না মিথ্যা, তা এখনও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এই খবর পাকিস্তানের রাজনীতিতে নতুন করে আতঙ্ক, উত্তেজনা এবং অনিশ্চয়তার আগুনে ঘি ঢালল, এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।












