রবিবার যুক্তরাষ্ট্র যখন ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়, তখন প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান (Pakistan) এই হামলার কড়া নিন্দা জানিয়ে জানায়—এই হামলা আন্তর্জাতিক সব রীতিনীতির লঙ্ঘন এবং ইরানের আত্মরক্ষার অধিকারকে খর্ব করে। ইসলামাবাদের (Pakistan) পক্ষ থেকে এই বিবৃতি এমন এক সময় দেওয়া হলো, যখন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য প্রস্তাব করেছিলেন।
পাকিস্তানের (Pakistan) পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার এক সরকারি বিবৃতিতে বলেন, “আমরা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। এই হামলা ইসরায়েলের ধারাবাহিক আগ্রাসনের পর চালানো হয়েছে। আমরা এই অঞ্চলে উত্তেজনার বিপজ্জনক বৃদ্ধি নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।”
তিনি (Pakistan) আরও বলেন, “পশ্চিম এশিয়ায় বর্তমানে যে নজিরবিহীন উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এই উত্তেজনার আরও বিস্তার হলে তা গোটা অঞ্চলের জন্য ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনবে।”
ইসহাক দার আরও (Pakistan) যোগ করেন, “নাগরিক জীবন এবং সম্পত্তির মর্যাদা রক্ষা করাটা এখন অতি প্রয়োজনীয়। এই সংঘর্ষ দ্রুত বন্ধ করতে হবে। আন্তর্জাতিক আইন—বিশেষ করে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের প্রতি সব পক্ষকে শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। আলোচনার মাধ্যমে, কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায়, এবং জাতিসংঘ সনদের মূলনীতি মেনে চলাই হলো এই সংকট সমাধানের একমাত্র উপায়।”
উল্লেখ্য, পাকিস্তান (Pakistan) ও ইরান ঘনিষ্ঠ মিত্র। দুই দেশের মধ্যে রয়েছে দীর্ঘ সীমান্ত, ধর্মীয় ঐতিহ্য ও পুরনো বাণিজ্যপথের সংযোগ। পাকিস্তানের মতো ইরানও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মুখ খুলে এবং গাজা ও পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি অভিযানকে কঠোরভাবে বিরোধিতা করে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দুই দেশের মধ্যে একাধিক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক ও নিরাপত্তা আলোচনা হয়েছে, এমনকি সীমান্তে সন্ত্রাসী ঘাঁটি লক্ষ্য করে একে অপরের ভূখণ্ডে সীমিত হামলাও চালিয়েছে তারা।
এই প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলা পাকিস্তানের জন্য বিশেষভাবে বিব্রতকর হয়ে দাঁড়ায়, কারণ মাত্র ক’দিন আগেই পাকিস্তান ট্রাম্পকে “শান্তির কাণ্ডারি” হিসেবে নোবেল পুরস্কারের জন্য প্রস্তাব দিয়েছিল। ইসলামাবাদ দাবি করেছে, ২০২৫ সালে ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কূটনৈতিক তৎপরতা ও নেতৃত্বই ছিল যুদ্ধ প্রতিরোধের মূল চাবিকাঠি। মে ১০ তারিখে হওয়া যুদ্ধবিরতিতে তাঁর “ব্যাক-চ্যানেল কূটনীতি” বড় ভূমিকা রেখেছিল বলে দাবি করে পাকিস্তান।
পাকিস্তান সরকার জানায়, ওই সময় ট্রাম্পের কৌশলী ভূমিকা ছিল এক যুগান্তকারী ঘটনা—যা দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় বড় মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। তবে ভারতের পক্ষ থেকে এই দাবিকে সরাসরি অস্বীকার করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জুন ১৭ তারিখে ট্রাম্পকে ফোনে জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত ছিল দুই দেশের সামরিক বাহিনীর সরাসরি যোগাযোগের ফল, এতে বাইরের কোনো দেশের ভূমিকা ছিল না।
এমন অবস্থায় ট্রাম্প যখন ইরানের মতো পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ মিত্রের ওপর হামলা চালালেন, তখন তা ইসলামাবাদের কূটনৈতিক অবস্থানকেই চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। ট্রাম্প পরে মন্তব্য করেন, তিনি অবশ্যই নোবেল পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য, কিন্তু “লিবারেল পক্ষপাতিত্বের” কারণে তিনি তা পাবেন না বলেই আশঙ্কা করেন।