বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus) সম্প্রতি লন্ডনের চ্যাথাম হাউজে এক আলোচনায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, ভারতে অবস্থানরত বিতাড়িত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনলাইন ভাষণ বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়াচ্ছে, কিন্তু তাতেও মোদি নীরব (Muhammad Yunus) ।
ইউনূস বলেন (Muhammad Yunus) , “আমি মোদিকে বলেছিলাম—আপনি তাকে (হাসিনাকে) আশ্রয় দিতে চাইলে দিতে পারেন, কিন্তু অনুরোধ করছি তাকে বোঝান যেন সে বাংলাদেশের মানুষকে এমনভাবে কথা না বলে। সে আগেভাগেই জানিয়ে দেয় কখন কখন সে কথা বলবে, আর পুরো বাংলাদেশে রাগের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে।”
মোদি (Muhammad Yunus) এই বিষয়ে বলেন, “এটা তো সোশ্যাল মিডিয়া, কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।” এর উত্তরে ইউনূস বলেন, “এই পরিস্থিতি অত্যন্ত বিস্ফোরক, এটা বলে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না।”
প্রশ্ন উঠলে ভারত বাংলাদেশের প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করছে কি না—ইউনূস (Muhammad Yunus) স্পষ্ট বলেন, “না।” তিনি জানান, শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের জন্য ভারতকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে এবং বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তার বিরুদ্ধে বিচার শুরু হয়েছে। হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যা-সহ নানা অভিযোগে মামলা চলছে।
২০২৪ সালের আগস্টে হাসিনা সরকার পতনের পর ইউনূস (Muhammad Yunus) অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন। তিনি বলেন, “আমরা ভারতকে শত্রু হিসেবে দেখি না। বরং আমরা চাই সবচেয়ে ভালো প্রতিবেশী সম্পর্ক তৈরি করতে। কিন্তু কিছু ভারতীয় সংবাদমাধ্যম থেকে যে ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে, তা বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর। বহু সময়েই এসব সংবাদমাধ্যম শীর্ষ নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে যুক্ত বলেও সন্দেহ হয়।”
ইউনূস (Muhammad Yunus) আরও বলেন, “আমরা শান্তি চাই, কিন্তু যখন বারবার এসব ভুল তথ্য, উস্কানিমূলক বক্তব্য ছড়ায়, তখন ক্ষোভ জমতে থাকে। এই মুহূর্তে আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ হলো সেই ক্ষোভ সামলানো।”
২০২৪ সালে গণ-আন্দোলনের মুখে হাসিনার পতন ঘটে। এরপর তিনি (Muhammad Yunus) ভারতে আশ্রয় নেন। ২০২৫ সালের মে মাসে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বর্তমান সরকার। এরপর শেখ হাসিনা ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়, যা ২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলন দমনকে কেন্দ্র করে গঠিত।
ইউনূস (Muhammad Yunus) ২০২৬ সালের এপ্রিল মাসে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন, বিএনপির আগাম নির্বাচনের দাবিকে প্রত্যাখ্যান করে। তিনি বলেন, “আমরা ইতিহাসের সবচেয়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। তাই বিচার ও নির্বাচন সংস্কার পর্যালোচনা শেষে আমি জানাচ্ছি, জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে।”
দুই দেশের উত্তেজনার মাঝেও ঈদ-উল-আধার উপলক্ষে ইউনূস ও মোদির মধ্যে শুভেচ্ছা বিনিময় হয়েছে। ৬ জুন ইউনূসের চিঠিতে মোদির বার্তাকে ‘দুই দেশের যৌথ মূল্যবোধের প্রতিফলন’ বলে উল্লেখ করা হয়। মোদিও ৪ জুনের চিঠিতে ঈদকে ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ বলে অভিহিত করেন এবং শান্তিপূর্ণ পৃথিবী গঠনে এই উৎসবের মূল্যবোধের প্রশংসা করেন।