ইজরায়েল (Israel) ইরানের উপর একাধিক এয়ারস্ট্রাইক চালিয়েছে, যেগুলোর লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলি এবং সামরিক ঘাঁটি। এই সাহসী অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে “রাইজিং লায়ন”। ইজরায়েল দাবি করেছে, তারা এই হামলা চালিয়েছে কারণ ইরান শীঘ্রই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করে ইজরায়েলের (Israel) উপর আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এই হামলার ফলে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা মারাত্মকভাবে বেড়ে গেছে এবং যুদ্ধের সম্ভাবনা নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
ইন্ডিয়া টুডে গ্লোবাল-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতে নিযুক্ত ইজরায়েলের (Israel) রাষ্ট্রদূত রিউভেন আজার এই সামরিক পদক্ষেপকে ন্যায্যতা দিয়েছেন। তিনি বলেন, “ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছিল, এটা ছিল ইজরায়েলের অস্তিত্বের জন্য সরাসরি হুমকি। তাই আমাদের কাছে আর কোনো বিকল্প ছিল না।”
আজার (Israel) দাবি করেন, কূটনৈতিক আলোচনার আড়ালে ইরান তাদের পারমাণবিক প্রকল্প এগিয়ে নিচ্ছিল। তিনি বলেন, “ইরান বহুবার প্রকাশ্যে ইজরায়েলকে ধ্বংস করার হুমকি দিয়েছে। তাদের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র গেলে তা শুধু আমাদের জন্য নয়, গোটা বিশ্বের জন্যই বিপজ্জনক।”
এই অপারেশনকে ইজরায়েলের (Israel) প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু “শুরুর মাত্র” বলেই উল্লেখ করেছেন এবং জানান, পরবর্তী কয়েক দিন বা সপ্তাহজুড়ে এই অভিযান চলবে। রাষ্ট্রদূত আজার জানিয়েছেন, এর জবাবে ইরান ইতিমধ্যেই ১০০টি ড্রোন ইজরায়েলের দিকে ছুঁড়েছে, যেগুলোর সবকটাই সফলভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। তিনি বলেন, “এটা এখনো শেষ নয়।”
ইজরায়েল (Israel) শুধু পারমাণবিক স্থাপনাই নয়, ইরানের সামরিক নেতৃত্ব ও ব্যালিস্টিক মিসাইল প্রকল্পগুলোকেও লক্ষ্যবস্তু করেছে। আজার জানান, ইরান পরিকল্পনা করেছিল আগামী ৩ বছরে ১০ হাজার এবং ৬ বছরে ২০ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করার। তিনি বলেন, এই ধরণের প্রস্তুতি ইজরায়েল ও অঞ্চলটির স্থিতিশীলতার জন্য বিপজ্জনক, তাই এত বড় পরিসরে আক্রমণ করা ছাড়া উপায় ছিল না।
যেসব দেশ ও সংগঠন ইজরায়েলের (Israel) পদক্ষেপকে ‘অতিরিক্ত’ বলে নিন্দা করছে, তাদের উদ্দেশ্যে আজার স্মরণ করিয়ে দেন, ইজরায়েল অতীতেও এমন আগাম আক্রমণ চালিয়েছে— যেমন ১৯৮১ সালে ইরাকে এবং ২০০৭ সালে সিরিয়ায়। “আমরা নিজেদের রক্ষা করি, সেইসঙ্গে গোটা বিশ্বের (Israel) নিরাপত্তাকেও সুরক্ষিত রাখি,” তিনি বলেন।
যদিও ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (OIC)-র অনেক সদস্য, বিশেষ করে সৌদি আরব, ইজরায়েলের (Israel) এই পদক্ষেপের নিন্দা করেছে, আজার দাবি করেন, অনেক দেশ গোপনে ইজরায়েলের পাশে রয়েছে কারণ তাদের নিজেরা ইরানের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারছে না। ইরানের ‘পারমাণবিক শক্তি শুধু বেসামরিক কাজে ব্যবহারের’ দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা বলেও তিনি (Israel) উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক পারমাণবিক সংস্থা IAEA সম্প্রতি একটি রিপোর্টে জানিয়েছে, ইরান তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে এবং চুক্তিভঙ্গ করেছে।
আজার এটাও স্বীকার করেন, এই গভীর অভিযানের সময় ইজরায়েল অন্য কয়েকটি দেশের আকাশসীমা ব্যবহার করেছে, যা অনেক বছর ধরে গোপন গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও যুক্তরাষ্ট্রসহ মিত্রদের সঙ্গে সমন্বয়ের ফল।

ইরান যেন আরও বড় প্রতিক্রিয়া না দেখায়, সেই আহ্বান জানিয়ে আজার বলেন, ইজরায়েল শুধুমাত্র সামরিক লক্ষ্যবস্তুকেই টার্গেট করছে।
“আমাদের কোনো আগ্রাসী উদ্দেশ্য নেই, শুধু আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এই পদক্ষেপ,” তিনি জোর দিয়ে বলেন।
বিশ্বের বহু মানুষ বিশেষ করে ৮০ লাখ ভারতীয় নাগরিক যারা উপসাগরীয় অঞ্চলে বসবাস করেন, তাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। এই প্রেক্ষিতে আজার আশ্বাস দেন, ইজরায়েল কোনওভাবে বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষতি করতে চায় না।
শেষে তিনি (Israel)বলেন, “কেউ যেন ধ্বংস হওয়ার হুমকিতে না থাকে— যেভাবে ইরান ইজরায়েলকে হুমকি দিয়ে এসেছে। ইজরায়েল নিজের নাগরিকদের রক্ষা করতে সম্পূর্ণ সক্ষম।”
বিশ্ব এখন অপেক্ষা করছে ইরান কী জবাব দেয় এবং কোনও তৃতীয় পক্ষ পরিস্থিতি সামাল দিতে এগিয়ে আসে কি না। কারণ বড়সড় যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আগের যেকোনও সময়ের চেয়ে বেশি।