গাজার খান ইউনিস এলাকা থেকে উদ্ধার করা হল ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় নিহত দুই ইজরায়েলি-আমেরিকান নাগরিকের মৃতদেহ (Hamas)। ইজরায়েলি সেনাবাহিনী এবং সিক্রেট সার্ভিস শিন বেট-এর যৌথ বিশেষ অভিযানে উদ্ধার করা হয় জুডিথ ওয়েনস্টাইন ও গাদ হাগাই-এর দেহ।
এই দম্পতি থাকতেন গাজার সীমান্তের কাছে অবস্থিত কিবুত্জ নির ওজ-এ। ৭ অক্টোবর সকালের তাঁদের উপর হামলা চালায় হামাসের (Hamas) জঙ্গিরা। গাদ হাগাই (৭২) একজন অবসরপ্রাপ্ত শেফ ও জ্যাজ সংগীতশিল্পী ছিলেন। জুডিথ (৭০) ছিলেন শিক্ষক। তিনি নিউ ইয়র্কে জন্মগ্রহণ করেন এবং ইজরায়েলি ও আমেরিকান পাসপোর্টের পাশাপাশি কানাডিয়ান নাগরিকত্বও ধারণ করতেন।
কিবুত্জ কর্তৃপক্ষ ২০২৩ সালের ডিসেম্বরেই তাঁদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত (Hamas) করেছিল। তবে মৃতদেহ উদ্ধার হল এবারই। এই দম্পতির চার সন্তান ও সাতজন নাতি-নাতনি রয়েছে। তাঁদের কন্যা আইরিস হাগাই লিনিয়াডো সোশ্যাল মিডিয়ায় এই খবর জানান, এবং ইজরায়েল ও আমেরিকার প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। পাশাপাশি, এখনও আটক থাকা বাকি ৫৬ জন বন্দির (Hamas) মুক্তির দাবিও তোলেন তিনি।
এই ঘটনার মাঝেই আবারও রক্তাক্ত হয়ে উঠল গাজা। ইজরায়েলি বিমান হানায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২২ জন। এর মধ্যে ১০ জন খান ইউনিসে এবং ৯ জন গাজা শহরে নিহত হন। আল-আহলি হাসপাতালের প্রাঙ্গণে আরও একটি হামলায় মারা গিয়েছেন তিনজন স্থানীয় সাংবাদিক। ইজরায়েলের দাবি, তারা ইসলামিক জিহাদের এক জঙ্গিকে নিশানা করেছিল।
যুদ্ধে সাংবাদিকদের মৃত্যু নিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গাজায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৮০-রও বেশি সাংবাদিক—যা অভূতপূর্ব।
মানবিক ত্রাণ সরবরাহও এই মুহূর্তে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। দেইর আল-বালাহ’র পথে যাওয়ার সময় ৬০ ট্রাকের ত্রাণ বহর লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। এক ড্রাইভার নিহত হয়েছেন, আহত আরও তিনজন। এর জেরে ফিলিস্তিনের পরিবহণ সংগঠন ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জাতিসংঘের মতে, এই মুহূর্তে ত্রাণ পৌঁছনো একেবারেই ঝুঁকিপূর্ণ। সেনা অবরোধ, রাস্তার নিরাপত্তাহীনতা, এবং চরম বিশৃঙ্খলার জেরে কার্যত অসহায় তারা।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইজরায়েলি হামলায় ৫৪,০০০-রও বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন—যার মধ্যে বহু নারী ও শিশু রয়েছেন। ইজরায়েল দাবি করে, তারা শুধুমাত্র সশস্ত্র জঙ্গিদের লক্ষ্য করেই আক্রমণ চালাচ্ছে, যারা বেসামরিক মানুষের মাঝেই লুকিয়ে থাকে।
অন্যদিকে, ৭ অক্টোবর হ্যামাসের হামলায় ইজরায়েলে প্রাণ হারান ১,২০০ জন, এবং ২৫১ জনকে বন্দি করা হয়। এখনও পর্যন্ত ৫৬ জন বন্দি হ্যামাসের হাতে রয়েছে বলে জানা গেছে, যাদের মধ্যে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ জীবিত রয়েছেন বলে অনুমান।
গোটা পরিস্থিতি এক অন্ধকার অধ্যায়ের দিকে ইঙ্গিত করছে—যেখানে মৃত্যু প্রতিদিনের বাস্তবতা, আর মানবিকতা ক্রমশ চাপা পড়ছে বারুদের গন্ধে।