আয়ারল্যান্ডের (Ireland) রাজধানী ডাবলিনে ফের এক ভারতীয়কে ঘিরে নৃশংস হামলার ঘটনা সামনে এল। ৩২ বছর বয়সি সন্তোষ যাদব, যিনি একজন সিনিয়র ডেটা সায়েন্টিস্ট এবং মাল্টিমোডাল এআই বিশেষজ্ঞ, তাঁর ওপর হামলা চালায় ৬ কিশোরের একটি দল (Ireland)। এই ভয়াবহ আক্রমণে তাঁর গালভাগ হাড় ভেঙে যায়, শরীরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে আঘাতের চিহ্ন। এই ঘটনার কয়েকদিন আগেই, ৪০ বছর বয়সি আরেক ভারতীয়কে টাল্লাঘট এলাকায় কিশোরদের একটি গ্যাং মারধর করে কাপড় খুলিয়ে দেয়। একের পর এক এই ধরনের হামলা আয়ারল্যান্ডে বেড়ে চলা বর্ণবিদ্বেষী হিংসার আশঙ্কাকে আরও প্রকট করে তুলছে (Ireland)।
সন্তোষ যাদব ২০২১ সালে কাজের উদ্দেশ্যে ভারত থেকে আয়ারল্যান্ডে যান (Ireland)। এই হামলার পর তিনি পুলিশের দ্বারস্থ হলেও অভিযোগ করেছেন, আইরিশ পুলিশ যথাযথ গুরুত্ব না দিয়ে বিষয়টি দীর্ঘসূত্রতায় ফেলে রেখেছে (Ireland)। তাঁর দাবি, ডাবলিনে ভারতীয় ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর বর্ণবিদ্বেষী হামলার ঘটনা বাড়ছে, অথচ প্রশাসনের ভূমিকা প্রায় নিশ্চুপ।
লিঙ্কডইন পোস্টে সন্তোষ যাদব জানিয়েছেন, হামলাকারী কিশোররা প্রথমে তাঁর চশমা ছিনিয়ে ভেঙে ফেলে এবং তারপর মাথা, মুখ, গলা, বুক, হাত ও পায়ে লাগাতার মারধর করে তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় ফেলে রেখে পালিয়ে যায় (Ireland)। পরে জরুরি পরিষেবা ডাকলে তাঁকে ব্লাঞ্চার্ডস্টাউন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে চিকিৎসকরা তাঁর জখম নির্ধারণ করেন এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসার জন্য রেফার করেন (Ireland)।
একটি স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, হামলাকারীদের হাতে সম্ভবত একটি ছোট চেইন ছিল, যেটি দিয়ে তাঁকে প্রায় তিন মিনিট ধরে আঘাত করা হয়। “তারা আমার বুক, পিঠ, হাত ও পায়ে আঘাত করতে থাকে। আমি আতঙ্কে জমে গিয়েছিলাম,” বলেন তিনি।
এই ঘটনার পর যাদব মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন এবং এখন ঘর থেকে বেরোতেও ভয় পাচ্ছেন। তিনি বলেন, “আমি এই দেশটিকে ভালোবাসতে চেয়েছিলাম, ভালো কিছু করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এই পরিস্থিতি মানসিকভাবে ভীষণভাবে ক্লান্তিকর ও হতাশাজনক। আমি একমাত্র সন্তান। ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছি, আমার মা একা আছেন ভারতে। আমি প্রতিবছর ৪০% ট্যাক্স দিচ্ছি, অথচ নিরাপত্তার অভাবে ভুগছি। এই দেশ আর নিরাপদ নয়।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ঘটনার পর দুইবার ফোন এলেও পুলিশ এখনো তাঁর বয়ান গ্রহণ করেনি। “আমি আহত অবস্থায় থানায় যেতে পারছি না, তাই পুলিশকে অনুরোধ করেছি আসতে। কিন্তু এখনো কেউ আসেনি। বিষয়টি তাঁরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন না,” বলেন সন্তোষ।
এই ঘটনার পর দেশজুড়ে ভারতীয় এবং প্রবাসী কমিউনিটির মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়েছে। শত শত মানুষ ডাবলিনের রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানায়। ‘Desi Community Against Racism’ সংগঠনের নেতা শশাঙ্ক চাকরবর্তী জানান, কেবল ডাবলিন নয়, কর্ক শহরেও অভিবাসী কর্মী ও ছাত্রদের ওপর হামলার ঘটনা বেড়ে গেছে এবং এর পেছনে রয়েছে কিশোরদের সংগঠিত গ্যাং। তিনি বলেন, “এই হামলাগুলো আকস্মিক নয়। এটি বড় আকারের বর্ণবিদ্বেষী মনোভাবের প্রতিফলন, যা সোশ্যাল মিডিয়ার ভুল তথ্য প্রচারের কারণে আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে।”
এই ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ ও সচেতনতা তৈরির আহ্বান জানান তিনি। “সম্পূর্ণ গার্ডা তদন্ত, স্কুল ও কমিউনিটিতে সচেতনতা অভিযান এবং স্পষ্ট রাজনৈতিক অবস্থান ছাড়া এই ঘৃণার পরিবেশ দূর করা সম্ভব নয়,” বলেন শশাঙ্ক।
‘Immigrant Council of Ireland’-এর সিইও তেরেসা বুজকোভস্কা জানান, বর্তমানে ভারতীয়দের লক্ষ্য করে হামলা বাড়লেও, এই সমস্যা কেবল একটি কমিউনিটির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তিনি বলেন, “পুলিশ বাহিনীর মধ্যে ঘৃণাজনিত অপরাধ চিহ্নিত করার ও সঠিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ নেই। আমরা বহুবার গার্ডার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি এই বিষয়ে, বিশেষ করে গণপরিবহণে এই ধরনের অপরাধ নিয়ে।”
তিনি আরও বলেন, “দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এই ধরনের ঘটনার কথা মূলধারার সংবাদমাধ্যমে উঠে আসছে না। ফলে সমস্যাটা চাপা থাকছে, যা আরও বিপজ্জনক।”
বর্তমানে সন্তোষ যাদবকে মানসিক ও শারীরিকভাবে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু আইরিশ সরকারের নীরবতা ও পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় উদ্বেগ বাড়ছে।