ইসরায়েল যখন ইরানের (Iran Israel conflict) পরমাণু স্থাপনাগুলিতে বড়সড় হামলা চালায়, তখন ইরানের শীর্ষ নেতৃত্ব এমন হামলার আশঙ্কা করলেও বাস্তবে তা আসবে এই সময়ে—এই মাত্রার আক্রমণ হবে, তা আশা করেনি বলেই জানিয়েছে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস।
এই হামলার আগে ইরান এবং আমেরিকার মধ্যে ষষ্ঠ দফার পরমাণু আলোচনা শুরু হওয়ার কথা ছিল রবিবার ওমানে (Iran Israel conflict)। এই আলোচনার আগে ইসরায়েল তেহরানের উপর এমন আঘাত হানবে, তা ইরান একেবারেই ভাবেনি। ফলে হামলার জন্য তারা প্রস্তুত ছিল না, আর সেই ফাঁকেই ইসরায়েল সফলভাবে তাদের ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ চালিয়ে যায়।
নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর রিপোর্টে এমন কিছু গোপন টেক্সট মেসেজ প্রকাশ পেয়েছে, যেখানে ইরানের শীর্ষ সেনা কর্মকর্তারা একে অপরকে প্রশ্ন করছেন (Iran Israel conflict), “আমাদের এয়ার ডিফেন্স কোথায় গেল?” এবং “ইসরায়েল কীভাবে এসে যখন খুশি যাকে খুশি মেরে দিচ্ছে, আর আমরা কিছুই করতে পারছি না?”
ইরানের (Iran Israel conflict) মধ্যে ধারণা ছিল, ইসরায়েল যুদ্ধের যে প্রস্তুতির কথা প্রচার করছিল, তা মূলত আলোচনার চাপ তৈরির কৌশল মাত্র। কিন্তু বাস্তবে সেই ‘প্রচার’ ছিল একটি প্রকৃত হামলার সূচনা। ফলে ইরানের নেতৃত্ব এমন হামলার বিরুদ্ধে কোনও বাস্তব প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নেয়নি।
রিপোর্টে আরও জানা গেছে, সেই রাতে ইরানের বেশিরভাগ শীর্ষ সামরিক অফিসাররা নিরাপদ বাঙ্কারে ছিলেন না, বরং নিজেদের ব্যক্তিগত বাড়িতে ছিলেন (Iran Israel conflict)। সেই সুযোগেই ইসরায়েল টার্গেট করে হত্যা করে বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর প্রধান জেনারেল হোসেইন সালামি এবং সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ হোসেইন বাঘেরিকে।
পরমাণু কর্মসূচিতে যুক্ত বহু বিজ্ঞানীও নিহত হন এই অভিযানে। আরও এক মারাত্মক ভুলের কথা উঠে এসেছে রিপোর্টে। ইরানের বিপ্লবী গার্ড এয়ার ফোর্সের প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমির আলি হাজিজাদেহ একটি জরুরি যুদ্ধ বৈঠক ডাকেন, যেখানে অনেক শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন (Iran Israel conflict)। সেই এক বৈঠকে ইসরায়েল একযোগে হামলা চালিয়ে সবাইকে হত্যা করে।
এই আক্রমণের পর ইরানের নেতারা নিজেদের মধ্যে প্রশ্ন তুলেছেন—কেন গোয়েন্দা সংস্থা ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার এত বড় ব্যর্থতা হলো, যার ফলে ইসরায়েল বিনা বাধায় এমন ধ্বংসাত্মক হামলা চালাতে পারল।
ইরানের চেম্বার অফ কমার্সের জ্বালানি কমিটির সদস্য হামিদ হোসেইনি ফোনে নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেন, “ইসরায়েলের হামলা পুরোপুরি ইরানের নেতৃত্বকে অবাক করে দেয়। শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের মৃত্যু, বিজ্ঞানীদের মৃত্যু—সবটাই অপ্রত্যাশিত। এ ছাড়া আমাদের আকাশ প্রতিরক্ষা যে এতটা দুর্বল, তা স্পষ্ট হয়ে গেল।”

তিনি আরও বলেন, “এই ঘটনা আমাদের সেনাবাহিনীর নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা ব্যবস্থায় ইসরায়েলের প্রবেশ ক্ষমতাকেও প্রকাশ করে দিয়েছে।”
হামলার পর ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনেইর নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়। সেখানে জানানো হয়, তিনি প্রতিশোধ চান, কিন্তু কোনও তাড়াহুড়ো করতে চান না।
কিন্তু এই প্রতিক্রিয়া নিয়ে ইরানের নেতৃত্বের মধ্যেও মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ শুরু করলে সেটা দীর্ঘমেয়াদী রণক্ষেত্রে রূপ নেবে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র জড়িয়ে পড়তে পারে এবং ইরানের দুর্বল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কথা মাথায় রেখে সেটি বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে।
বৈঠকে এক কর্মকর্তা সতর্ক করে বলেন, যদি ইসরায়েল ইরানের জ্বালানি বা জলের অবকাঠামো ধ্বংস করে, তবে দেশে বিশৃঙ্খলা ও বিদ্রোহ শুরু হতে পারে।
একজন আইআরজিসি সদস্য জানিয়েছেন, আয়াতোল্লাহ খামেনেই এক কঠিন সিদ্ধান্তের মুখে দাঁড়িয়ে আছেন—পূর্ণ যুদ্ধের পথে গেলে তাঁর দীর্ঘদিনের শাসন ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে, আবার পিছু হটলেও সেটা পরাজয় হিসেবে দেখা হবে, দেশের ভিতর এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে।