ইজরায়েলের ধারাবাহিক বিমান হামলার পরে শুক্রবার ইরানের (Iran) সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে তীব্র ভয় ও ক্ষোভ। কেউ কেউ সরকারের প্রতি প্রতিশোধ নেওয়ার আহ্বান জানালেও, অনেকেই চিন্তিত যে এই সংঘাত আরও কঠিন দিন বয়ে আনবে, এমন এক দেশের জন্য যা আগে থেকেই সংকটে জর্জরিত।
তেহরান (Iran) ও অন্যান্য শহরগুলোতে রাতভর বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে ওঠে আকাশ। ইজরায়েল জানিয়ে দিয়েছে যে, এই অপারেশন যতদিন লাগবে ততদিন চলবে। এর পরেই কিছু ইরানি নাগরিক তুরস্কের দিকে পালানোর প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন।
নাতাঞ্জ শহরের বাসিন্দা (Iran) ৩৯ বছর বয়সি মারজিয়েহ বলেন, “আমি প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দে ঘুম থেকে উঠে পড়ি। সবাই আতঙ্কে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসে। আমি ভয় পাচ্ছি আমার ছেলেমেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে। যদি পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়?” নাতাঞ্জ শহরে ইরানের (Iran) একটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক কেন্দ্র আছে এবং সেখানে বিস্ফোরণের খবরও পাওয়া গেছে।
ইজরায়েল বলেছে, তারা ইরানের (Iran) পারমাণবিক স্থাপনাগুলি, ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা এবং সেনা কমান্ডারদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে, যাতে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে না পারে। তবে ইরান বারবার বলে এসেছে তাদের পারমাণবিক প্রকল্প শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে তৈরি।
এই হামলার পর শুক্রবার সকালে অনেক ইরানি (Iran) ব্যাংকে ছুটে গিয়ে টাকা তুলতে শুরু করেন। ৫১ বছর বয়সি অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মচারী মাসউদ মুসাভি বলেন, “আমি এক্সচেঞ্জ অফিস খোলার অপেক্ষায় ছিলাম, যেন আমি তুর্কি লিরা কিনে আমার পরিবার নিয়ে তুরস্কে চলে যেতে পারি। এখন আকাশপথ বন্ধ, তাই আমরা সড়কপথে যাব।” তিনি আরও বলেন, “আমি যুদ্ধের বিরুদ্ধে। আমি কোনও নিরীহ মানুষের মৃত্যু চাই না। আমরা তুরস্কে থাকব যতদিন না পরিস্থিতি শান্ত হয়।”
১৯৭৯ সালের ইসলামিক বিপ্লবের পর থেকে ইরানিরা (Iran) একটার পর একটা সংকটের মুখোমুখি হয়েছে—ইরাকের সঙ্গে আট বছরের যুদ্ধ, সরকারবিরোধী বিক্ষোভ দমন, এবং পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা তাদের জীবনকে আরও কঠিন করে তুলেছে।
ইরানের ধর্মীয় নেতাদের বিরোধী কিছু নাগরিক আশা করছেন, এই হামলা হয়তো সরকারের পতনের সূচনা হতে পারে। কিন্তু এক তেহরানবাসী (Iran) বলেন, “আমি ইসলামিক রিপাবলিকের সমর্থক না হলেও, ইজরায়েলের এই আক্রমণের জবাব দেওয়া উচিত। আমরা যদি পাল্টা জবাব না দিই, তবে এক সময় আমাদের অস্ত্রও কেড়ে নেওয়া হবে। এখন লড়াই করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।” তার চোখে ছিল প্রচণ্ড রাগ।
তেহরানে (Iran) কিছু মানি এক্সচেঞ্জার জানিয়েছেন, সাধারণ দিনের তুলনায় শুক্রবার অনেক বেশি মানুষ ভিড় করেন বিদেশি মুদ্রা কিনতে। তবে কেউ কেউ বলছেন, মানুষ বেশি আতঙ্কিত নয়।
৬৪ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা ফারিবা বাশারাতি বলেন, “আমি ইজরায়েলের হামলাকে সমর্থন করি না, তবে বুঝি কেন আমাদের নেতারা পাল্টা হামলার কথা বলছেন। কিন্তু আমরা সাধারণ মানুষ কী করব? আমরা তো বহু আগেই ভেঙে পড়েছি।” তিনি এখন তাবরিজে নিজের সন্তান ও নাতি-নাতনিদের সঙ্গে থাকেন।
অনেক ইরানি (Iran) মনে করেন ইরানের পারমাণবিক প্রকল্প থাকা উচিত, কিন্তু এখন কেউ কেউ ভাবছেন, এই প্রকল্পের খরচ খুব বেশি হয়ে যাচ্ছে। ২৯ বছর বয়সি শিক্ষক মোহাম্মদরেজা বলেন, “এই প্রকল্পের জন্য আমাদের জীবনের মূল্য দিতে হচ্ছে। এখন আবার যুদ্ধের মুখে পড়তে হবে? আমি আর কোনও দুর্দশা চাই না।”

সম্প্রতি বছরগুলিতে ইরানে (Iran) রাজনৈতিক দমন-পীড়ন, আর্থিক দুরবস্থা এবং সামাজিক নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে একাধিক বিক্ষোভ হয়েছে। ২০২২ সালে এক তরুণী পুলিশ হেফাজতে মারা যাওয়ার পর দেশজুড়ে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।
শুক্রবার তেহরান সহ (Iran) বিভিন্ন শহরে সাধারণ পোশাকে নিরাপত্তা বাহিনী ও পুলিশের উপস্থিতি দেখা গেছে। দেশে বিদ্যুৎ ও জলের অভাব, মুদ্রার অবনতি, ও জনগণের ক্রমবর্ধমান ক্ষোভের মধ্যে ইরানের শাসকগোষ্ঠী চরম চাপে রয়েছে। তবে এখনো তারা শক্তভাবে ক্ষমতায় রয়েছে—বিশ্বস্ত নিরাপত্তা বাহিনীর কারণে।
পবিত্র শহর কোম থেকে ফোনে আলি নামে একজন বলেন, “আমার বাবা ইরান-ইরাক যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন। আমি বাসিজ (স্বেচ্ছাসেবী মিলিশিয়া) সদস্য। আমি লড়ব এবং মরতেও রাজি আছি আমাদের পারমাণবিক অধিকার রক্ষা করার জন্য। ইজরায়েল ও তার মিত্র আমেরিকা আমাদের এই অধিকার কেড়ে নিতে পারবে না।”