জাতিসংঘের মঞ্চ থেকে ফের বিতর্কের জন্ম দিলেন পাকিস্তানের প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো (India Pakistan Tension)। ভারতের “অপারেশন সিঁদুর” চলাকালীন পাকিস্তান এবং পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে জঙ্গি ঘাঁটিগুলিতে বিমান হামলার পর, মৃত লস্কর-ই-তইবা (LeT) জঙ্গিদের জানাজার নামাজ পরিচালনা করতে দেখা যায় হাফিজ আব্দুর রউফ নামের এক ব্যক্তিকে (India Pakistan Tension) । সেই ছবিটি আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের তরফে প্রমাণ হিসেবে বারবার দেখানো হলেও, ভুট্টো দাবি করেছেন — “এই ব্যক্তি একজন সন্ত্রাসবাদী নন। শুধুমাত্র নামের মিল আছে, কিন্তু তিনি সেই তালিকাভুক্ত ব্যক্তি নন।”
ভুট্টো বলেন (India Pakistan Tension), “ভারতের প্রতিনিধি দল এ ছবি দেখিয়ে জোর করে সবাইকে বোঝাতে চায়, যে এই ব্যক্তি একজন জঙ্গি। কিন্তু বাস্তবতা হলো, উনি সন্ত্রাসবাদী নন। ওনার নাম শুধুমাত্র সেই তালিকাভুক্ত ব্যক্তির সঙ্গে মিলে গেছে।”
কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক মিডিয়া উইং ISPR নিজেই যে প্রমাণ দিয়েছে, তা ভুট্টোর দাবি নাকচ করে দেয় (India Pakistan Tension)। একটি কম্পিউটারাইজড ন্যাশনাল আইডেন্টিটি কার্ড (CNIC), যা ISPR প্রকাশ করে, তাতে জন্মতারিখ ও পরিচয় নম্বর সেই একই, যা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ দপ্তরের OFAC (Office of Foreign Assets Control)-এর জঙ্গি তালিকায় থাকা হাফিজ আব্দুর রউফ-এর সঙ্গে মিলে যায়।
এই আইডি কার্ড আরও প্রমাণ দেয়, রউফ পাকিস্তান মারকাজি মুসলিম লীগ (PMML)-এর সঙ্গে যুক্ত, যা আগের মিলিট্যান্ট সংগঠন MML-এর উত্তরসূরি — এই দুটি দলকেই লস্কর-ই-তইবা-এর ছদ্মবেশী সংগঠন হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০১৮ সালের ২ এপ্রিল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল (India Pakistan Tension)।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ দপ্তর আরও বলেছে, “লস্করের তহবিল জোগাড়ে হাফিজ আব্দুর রউফ-এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হাতে গোনা।”
তবুও, বিলাওয়াল ভুট্টো তার অবস্থান বজায় রেখেছেন (India Pakistan Tension)। তিনি ও ISPR দাবি করেছে, রউফ একজন “স্থানীয় ইমাম” এবং “পারিবারিক মানুষ” — যিনি শুধু নামাজে অংশ নিয়েছেন। কিন্তু ভারত আন্তর্জাতিক মঞ্চে যে ছবি ও তথ্য দিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এবং পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিতে জানাজা পরিচালনা করছেন রউফ।
ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি এই ছবি নিয়ে বলেছিলেন, “ওরা শুধু ধর্মীয় ব্যক্তি নয় — ওরা নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসবাদী এবং ওদের সহযোগীরা।”
জাতিসংঘে ভাষণের আরেক অংশে, বিলাওয়াল ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যৌথ সন্ত্রাস দমন চুক্তির আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “ISI ও RAW একসাথে বসে কাজ করলে, আমরা উপমহাদেশে সন্ত্রাস অনেকটা কমিয়ে আনতে পারবো।”
তিনি আরও বলেন, “১৫০-১৭০ কোটি মানুষকে আমরা হাতে গোনা কিছু সন্ত্রাসবাদীর দয়া ও হিংস্রতার উপর ছেড়ে দিতে পারি না। এতে পারমাণবিক যুদ্ধের সম্ভাবনাও তৈরি হয়।”
নিউ ইয়র্কে পাকিস্তানি কমিউনিটির এক অনুষ্ঠানে, ভুট্টো (India Pakistan Tension) দাবি করেন, পাকিস্তান এখন সন্ত্রাস দমনে “বিশেষজ্ঞ।” তিনি বলেন, “ভারত যদি সত্যি সন্ত্রাস দমন করতে চায়, তাহলে ISI থেকে শিখে নিক। আমরাই এখন এক্সপার্ট।”
কিন্তু গোটা আন্তর্জাতিক পরিসরে পাকিস্তানের এই অবস্থান নিয়ে প্রবল সমালোচনা চলছে। কারণ, ভারতের তরফে উপস্থাপিত প্রমাণ, ISPR-এর নিজস্ব তথ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা — সবই দেখাচ্ছে যে রউফ লস্কর-ই-তইবা-এর সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত এবং তিনি কোনও সাধারণ ব্যক্তি নন।
এই প্রেক্ষাপটে, সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে, বিলাওয়াল ভারতীয় মুসলিমদের বিরুদ্ধে কথিত ‘অবমাননার’ অভিযোগ তোলেন (India Pakistan Tension), যা পহেলগাঁওয়ে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলায় ২৬ জন সাধারণ মানুষের মৃত্যুর পরে আরও বিতর্ক তৈরি করেছে। এক সাংবাদিক জানান, সেই অভিযানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে মুসলিম অফিসাররাও ছিলেন। প্রশ্ন শুনে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে ভুট্টো মেনে নেন, “অপারেশনের দিক দিয়ে আপনি ঠিক বলছেন।”