মঙ্গলবার গাজা (Gaza) উপত্যকার কেন্দ্রীয় অংশে একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে যাওয়ার পথে ইসরায়েলি গুলিতে অন্তত ১৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং বহু মানুষ আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। আহতদের নুসেইরাত ক্যাম্পের আল-আওয়দা হাসপাতাল এবং গাজা সিটির (Gaza) আল-কুদস হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা গাজা(Gaza) উপত্যকার ওয়াদি গাজার এলাকায় “সন্দেহভাজনদের” দিকে সতর্কতামূলক গুলি চালিয়েছিল, যারা নাকি সেনাদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সেনাবাহিনী জানায়, গুলি চালানো হয়েছিল ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের খোলার আগেই এবং তা ঘটেছিল কেন্দ্র থেকে কয়েকশ মিটার দূরে (Gaza)। তারা আরও বলেছে, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ যে নিহতের সংখ্যা বলছে তা তাদের কাছে থাকা তথ্যের সঙ্গে মেলে না।
উল্লেখ্য, এই ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (GHF)। সম্প্রতি ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ফিলিস্তিনিদের (Gaza) সতর্ক করে জানিয়েছে, সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত এই ত্রাণ বিতরণ সাইটে যাওয়ার রাস্তা “সেনা নিয়ন্ত্রিত এলাকা” হিসেবে বিবেচিত হবে এবং সেসব এড়াতে বলা হয়েছে। মঙ্গলবারের ঘটনায় এখন পর্যন্ত GHF-এর পক্ষ থেকে কোনও মন্তব্য আসেনি।
GHF গত মে মাসের শেষ দিকে গাজায় খাদ্য সামগ্রী বিতরণ শুরু করে। তবে জাতিসংঘ এই মডেলকে পক্ষপাতদুষ্ট ও নিরপেক্ষ নয় বলে জানিয়েছে।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তু বিষয়ক সংস্থার (UNRWA) প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেছেন, “প্রতিদিন ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে গুলি ও আহতের ঘটনা ঘটছে, যেখানে ইসরায়েলি সেনা ও বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থাগুলো মোতায়েন থাকে।” তিনি আরও বলেন, “এই অপমানজনক প্রক্রিয়ায় হাজার হাজার ক্ষুধার্ত ও অসহায় মানুষকে মাইলের পর মাইল হেঁটে যেতে হচ্ছে, যেখানে সবচেয়ে দুর্বলরা সুযোগ পাচ্ছে না।”
একজন ফিলিস্তিনি (Gaza), মোহাম্মদ আবু আমর (৪০), জানান, “রাত ২টায় ত্রাণের আশায় রওনা হয়েছিলাম, কিন্তু পৌঁছানোর আগেই জানতে পারি পাঁচ মিনিটেই সব ত্রাণ শেষ হয়ে গেছে। এটা একেবারেই অপ্রতুল। বহু মানুষ ২০ কিমি হেঁটে এসে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছে।” তিনি বলেন, “গুলি চলছিল, তবে আমি নিজ চোখে কিছু দেখিনি।”
লাজারিনি তীব্র ভাষায় বলেন, “ত্রাণ (Gaza) কার্যক্রমের দায়িত্ব জাতিসংঘের হাতে থাকা উচিত। তারাই একমাত্র নিরাপদ ও বড় পরিসরে বিতরণ চালাতে সক্ষম। আমাদের রয়েছে প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা, দক্ষতা এবং জনবিশ্বাস।”

এদিকে, গাজার দেইর আল-বালাহ এলাকায় একটি বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় আরও আটজন নিহত হয়েছেন। অর্থাৎ মঙ্গলবার দিনটিতেই গাজায় অন্তত ২৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা উত্তর গাজা (Gaza) থেকে ছোড়া একটি রকেট প্রতিহত করেছে। এর মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে হামাস এবং অন্যান্য গোষ্ঠী এখনো রকেট ছোড়ার সক্ষমতা রাখে।
দীর্ঘ ১১ সপ্তাহের অবরোধের পর ইসরায়েল ১৯ মে থেকে জাতিসংঘের নেতৃত্বে কিছু ত্রাণ কার্যক্রম আবার চালু করতে দেয়। তবে জাতিসংঘ জানিয়েছে, এই ত্রাণপ্রবাহ আসলে “সমুদ্রের একফোঁটা” ছাড়া কিছু নয়।
একইসঙ্গে গাজা সিটির উপকূলীয় সড়কের নাবুলসি রাউন্ডআবাউটের কাছে জাতিসংঘের গুদামে পাঠানো প্রায় ৪০টি ট্রাকের ময়দা লুট করে নিয়েছে ক্ষুধার্ত ও গৃহহীন জনগণ এবং কিছু চোরচক্র।
এই ভয়াবহ যুদ্ধ শুরু হয়েছিল ৭ অক্টোবর ২০২৩-এ, যখন হামাস-নেতৃত্বাধীন জঙ্গিরা ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে ১,২০০ জনকে হত্যা ও ২৫১ জনকে অপহরণ করে। এটি ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী দিন হিসেবে চিহ্নিত। পাল্টা অভিযানে ইসরায়েল এখন পর্যন্ত গাজায় ৫৪,০০০-এরও বেশি মানুষ হত্যা করেছে, যাদের অধিকাংশই সাধারণ নাগরিক।