মায়ানমারের চাইনিজ মাফিয়া নিয়ন্ত্রিত ভয়ঙ্কর সাইবার অপরাধ কেন্দ্র থেকে পালিয়ে গিয়ে থাইল্যান্ডে (Thailand) আটক প্রায় ৫০০ ভারতীয় নাগরিককে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে ভারত সরকার। থাইল্যান্ডের (Thailand) প্রধানমন্ত্রী অনুতিন চারণভিরাকুল বুধবার জানিয়েছেন, ভারত খুব শিগগিরই একটি বিশেষ বিমান পাঠাবে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে।
থাই প্রধানমন্ত্রী (Thailand) বলেন, “ভারতীয় সরকার আমাদের সহযোগিতা চেয়েছে। তাঁরা নিজেরাই এই বিষয়টি সামলাতে চায়, যাতে আমাদের উপর কোনও বাড়তি চাপ না পড়ে। ভারত একটি বিশেষ বিমান পাঠাবে, যা সরাসরি মায়ে সট (Mae Sot) শহরে অবতরণ করবে এবং ভারতীয় নাগরিকদের নিয়ে দেশে ফিরবে।”
প্রায় এক সপ্তাহ আগে মায়ানমারের কুখ্যাত সাইবার অপরাধ কেন্দ্র ‘KK Park’-এ সেনা অভিযান চালানো হয়। সেই অভিযানের সময় সেখান থেকে প্রায় ৭০০ জন বিদেশি শ্রমিক পালিয়ে যায়, যাঁদের মধ্যে শতাধিক ভারতীয়ও ছিলেন। পরে সীমান্ত পেরিয়ে থাইল্যান্ডে প্রবেশের সময় তাঁদের আটক করে স্থানীয় পুলিশ।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, “আমরা থাইল্যান্ডে (Thailand) আটক ভারতীয় নাগরিকদের বিষয়ে অবগত। তাঁরা গত কয়েকদিন ধরে মিয়ানমার থেকে থাইল্যান্ডে প্রবেশ করেছেন। আমাদের দূতাবাস থাই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে, তাঁদের জাতীয়তা যাচাই করে এবং প্রয়োজনীয় আইনি প্রক্রিয়া শেষ হলেই তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।”
এর আগে দিনেই থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জানান, ব্যাংককে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত থাই ইমিগ্রেশন দফতরের প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন, যাতে এই প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হয়।
স্থানীয় প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে থাইল্যান্ডের সীমান্ত এলাকায় ২৮টি দেশের মোট প্রায় ১,৫০০ নাগরিক আশ্রয় নিয়েছেন, যাঁরা সবাই মায়ানমারের ওই সাইবার প্রতারণা কেন্দ্রগুলি থেকে পালিয়ে এসেছেন।
জানা গিয়েছে, মিয়ানমারের KK Park এবং আশেপাশের বেশ কয়েকটি কম্পাউন্ড পরিচালনা করে চাইনিজ অপরাধ চক্র। এই জায়গাগুলি মূলত সাইবার জালিয়াতি, অনলাইন প্রতারণা এবং ক্রিপ্টো স্ক্যামের বড় কেন্দ্র। এই সমস্ত কম্পাউন্ড স্থানীয় মিলিশিয়া ও মায়ানমারের সামরিক জান্তার আশ্রয়ে চলছে বলে অভিযোগ।
জাতিসংঘের এক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, থাইল্যান্ড, মায়ানমার, লাওস ও কম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকায় কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে ভয়াবহভাবে বেড়েছে এই সাইবার প্রতারণার ব্যবসা। হাজার হাজার মানুষকে পাচার করে এই সমস্ত কম্পাউন্ডে কাজ করানো হচ্ছে, যেখানে প্রতারণার মাধ্যমে প্রতি বছর কয়েক বিলিয়ন ডলার উপার্জন করছে এই অপরাধ চক্রগুলি।
এই বছরের শুরুতেও থাই-মায়ানমার সীমান্ত থেকে কয়েকশো ভারতীয়কে উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। তবে KK Park-এ সাম্প্রতিক সেনা অভিযান ও এই নতুন আটক ঘটনাটি প্রমাণ করছে যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভারতীয় নাগরিকদের মানবপাচার ও সাইবার প্রতারণা চক্রের ফাঁদে পড়ার আশঙ্কা এখনও প্রবল।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই উদ্ধার হওয়া ভারতীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা হয়েছে এবং তাঁদের দ্রুত দেশে ফেরানোর জন্য ভারত ও থাইল্যান্ডের মধ্যে সমন্বয় চলছে।











