ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী (Israel) বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ১৯৯৬ সালের ১০ জুলাই মার্কিন কংগ্রেসে যখন ভাষণ দেন, তখন থেকেই তিনি সতর্ক করেছিলেন যে, ইরানের পারমাণবিক শক্তি অর্জন ঠেকানোর সময় দ্রুত শেষ হয়ে আসছে। তিনি বলেছিলেন, “আমরা নিশ্চিত, আমেরিকা আবারও নেতৃত্ব দেবে আমাদের মুক্ত সভ্যতাকে এই চূড়ান্ত বিপদ থেকে রক্ষা করতে। কিন্তু, ভদ্র মহোদয়গণ, সময় ফুরিয়ে আসছে।”
একের পর এক তিন দশক ধরে নেতানিয়াহু (Israel) চেষ্টা করেছেন আমেরিকাকে রাজি করাতে যেন তারা ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেয়। তাই যখন ইজরায়েল (Israel) ইরানের উপর বড়সড় হামলা চালাল, এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পূর্ণ সমর্থন পেল, তখন অনেক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এবং ইজরায়েলি (Israel) হিব্রু সংবাদমাধ্যম মিথ্যা প্রচার করতে থাকে যে ইজরায়েল-আমেরিকার মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে।
কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, এটা ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়েছে—ইরান যেন ভাবে ইজরায়েলের (Israel) তরফ থেকে তৎক্ষণাত কোনো হামলা আসছে না। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর মধ্যে ‘ঝগড়া’ হয়েছে বলে যে গুজব ছড়ানো হয়েছিল, তা ছিল পুরোটাই এক কৌশল—ইরানকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য।
এই পুরো পরিকল্পনা ছিল মাসের পর মাস ধরে সাজানো এক “হোমসিয়ান নাটক”, যেটা চোখের সামনে থেকেই ঘটেছে কিন্তু বোঝা যায়নি। একটা রীতিমতো ম্যাজিক ট্রিক। আর এই ট্রিক পুরোপুরি সফল হয়েছে। যদিও ট্রাম্প পরে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এবং অন্যান্য বড় সংবাদমাধ্যমে ইজরায়েলের (Israel) হামলার প্রশংসা করেন, তবুও আন্তর্জাতিক মিডিয়া সেই পুরনো নাটক চালিয়েই যায়। সিএনএনের শিরোনাম ছিল, “ট্রাম্প চাননি ইজরায়েল আক্রমণ করুক, কিন্তু তারা করেই ফেলল”।
সিএনএনের বিশ্লেষক অ্যান্ড্রু লিপটাক লিখেছেন, “ট্রাম্প বলেছিলেন তিনি বিদেশে যুদ্ধ চান না, কিন্তু এখন তাঁর প্রেসিডেন্সির সবচেয়ে বড় পরীক্ষার মুখে পড়েছেন।” আসলে বাস্তবতা ছিল—ট্রাম্প ইরানকে ৬০ দিনের সময় দিয়েছিলেন আলোচনার জন্য। ইরান সেই আলোচনায় রাজি না হওয়ায়, দিন ৬১-তে ইজরায়েল (Israel) হামলা চালায় ট্রাম্পের পূর্ণ অনুমোদনে।

গার্ডিয়ান-এর ওয়াশিংটন রিপোর্টার অ্যান্ড্রু রথ-ও এই ধোঁকায় পা দিয়েছিলেন। তার শিরোনাম ছিল, “ইজরায়েলের (Israel) হামলা প্রমাণ করল ট্রাম্প আর নেতানিয়াহুকে থামাতে পারছেন না, মধ্যপ্রাচ্য যাচ্ছে বিশৃঙ্খলার দিকে।” রথ দাবি করেন, “এই একতরফা হামলা ট্রাম্পের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ভাঙন এবং ইরানের সঙ্গে নতুন কোনো শান্তিচুক্তির সম্ভাবনা ধ্বংস করে দিল।” আসলে বাস্তবতা ছিল পুরো উল্টো—ইরানই আলোচনার দরজা বন্ধ করেছিল, এবং ইজরায়েল একমাত্র তার নিজের সুরক্ষার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেয়।
আর এই প্রশ্ন উঠছেই—মধ্যপ্রাচ্য কি আগে থেকে শান্ত ছিল? অক্টোবর ৭-এর হামলা এবং তার পরবর্তী ধ্বংসযজ্ঞ কি যথেষ্ট বিশৃঙ্খল ছিল না?
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (AP) এর হেডলাইন ছিল, “ইজরায়েলের ইরানে হামলা বাড়িয়ে দিচ্ছে সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কা”। নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর প্রতিবেদনেও ঠিক এমন কথাই লেখা হয়েছে, “মধ্যপ্রাচ্যের দুই শক্তিশালী দেশের ছায়াযুদ্ধ নতুন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা সর্বাত্মক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে।” কিন্তু বাস্তবতা হলো, ইজরায়েল বহু দিন ধরেই সাতটি ফ্রন্টে যুদ্ধ করছে—না শুধু সামরিকভাবে, বরং মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়া, আর কলেজ ক্যাম্পাসেও। তাহলে এর চেয়েও বেশি আর কী হতে পারে?
যা নিঃসন্দেহে সত্যি, তা হলো—জেরুজালেম ও ওয়াশিংটনের প্রশাসন বিশ্বজুড়ে শীর্ষ সংবাদমাধ্যমগুলোকে পুরোপুরি বিভ্রান্ত করেছে, আর তারা সেই ফাঁদে পা দিয়েছে।