স্বাধীনতা দিবস এলেই ভারত ও পাকিস্তান উদ্যাপন করে ১৪ ও ১৫ আগস্ট (Balochistan)। কিন্তু একই সময়ে বালুচরা (Balochistan) শুধুই দীর্ঘশ্বাস ফেলেন — ‘কবে মিলবে আমাদের সেই কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা?’
কিন্তু অনেকেই জানেন না, এক সময় এই অঞ্চলটি ছিল স্বাধীন (Balochistan)। যদিও সেই স্বাধীনতা স্থায়ী হয়েছিল মাত্র ২২৭ দিন। একদিকে নেতা খান অব কালাতের সীমিত দূরদর্শিতা (Balochistan), অন্যদিকে ব্রিটিশদের চাতুরতা এবং সর্বশেষে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলি জিন্নার বিশ্বাসঘাতকতা — এই তিনের মারপ্যাঁচে হারিয়ে যায় বালুচিস্তানের (Balochistan) স্বপ্ন।
কালাতের স্বাধীনতা: ইতিহাসের এক বিস্মৃত অধ্যায়
১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার সময় বর্তমান বালুচিস্তান ছিল চারটি রাজ্য নিয়ে গঠিত — কালাত, খারান, লাস বেলা ও মাকরান। এই রাজ্যগুলিকে দেওয়া হয় তিনটি বিকল্প: ভারতের সঙ্গে যোগদান, পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্তি, অথবা স্বাধীন থাকা।
মোহাম্মদ আলি জিন্নার প্রভাবে খারান, লাস বেলা ও মাকরান পাকিস্তানের সঙ্গে যোগ দেয়। কিন্তু কালাত ছিল আলাদা অবস্থানে। ১৮৭৬ সালের একটি চুক্তি অনুযায়ী, কালাত ব্রিটিশদের হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত ছিল, এবং তাই ভারতের অন্যান্য রাজ্যের মতো এটি বাধ্য ছিল না পাকিস্তান বা ভারতের সঙ্গে যোগ দিতে।
কালাতের শেষ শাসক খান মির আহমদ ইয়ার খান স্বাধীনতার পথ বেছে নেন। এমনকি ১৯৪৬ সালে তিনি জিন্নাকে নিজের আইনি উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন, যার উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশ সরকারের কাছে তাদের স্বাধীনতার দাবিকে দৃঢ়ভাবে তুলে ধরা।
স্বাধীনতা ও প্রতারণা
৪ আগস্ট, ১৯৪৭-এ দিল্লিতে এক ঐতিহাসিক বৈঠকে লর্ড মাউন্টব্যাটেন, জিন্না, নেহরু, খান অব কালাত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এখানে কালাতের স্বাধীনতার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এরপর ১১ আগস্ট মুসলিম লিগ এবং কালাতের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যেখানে মুসলিম লিগ কালাতকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
১৫ আগস্ট ১৯৪৭-এ, ভারত স্বাধীন হওয়ার দিনেই কালাতও নিজেদের স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ঐতিহ্যবাহী পতাকা উত্তোলন করা হয়, এবং স্বাধীন শাসকের নামে খুতবা পাঠ হয়।
পাকিস্তানের প্রতারণা এবং কালাতের পতন
কিন্তু স্বাধীনতার এই স্বপ্ন খুব বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। পাকিস্তানের উদ্দেশ্য ছিল স্পষ্ট — কালাতকে জোর করে অন্তর্ভুক্ত করা। অক্টোবর ১৯৪৭-এ খান অব কালাত যখন করাচি যান, হাজার হাজার বালুচ মানুষ তাঁকে স্বাগত জানান, কিন্তু পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বা গভর্নর জেনারেল তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেননি। স্পষ্ট হয়ে যায় পাকিস্তানের নীতির পরিবর্তন।
মার্চ ১৮, ১৯৪৮-এ জিন্না খারান, লাস বেলা এবং মাকরান অঞ্চলকে কালাত থেকে বিচ্ছিন্ন ঘোষণা করেন। কালাত হয়ে পড়ে একা — কোনও কৌশলগত সহায়তা নেই, বাহ্যিক সহযোগিতাও নেই। একই সময়ে পাকিস্তান সেনা প্রবেশ করে পাসনি, জিওয়ানি ও তুরবাতে। অবশেষে ২৭ মার্চ, খান অব কালাত আত্মসমর্পণ করে কালাতের পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্তির ঘোষণা দেন।
মাত্র ২২৭ দিন স্বাধীন থাকার পর, বালুচিস্তান হারিয়ে যায় পাকিস্তানের অঙ্গরাজ্যে।
প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ: বালুচ জাতীয়তাবাদের সূচনা
এই জোরপূর্বক অন্তর্ভুক্তি জন্ম দেয় বালুচ জাতীয়তাবাদের। ১৯৪৮-এ খান অব কালাতের ভাই প্রিন্স আবদুল করিম প্রথম বিদ্রোহের সূচনা করেন, যদিও তা পাকিস্তান সেনাবাহিনী দ্বারা দমন করা হয়।
পরবর্তী দশকগুলোতে একাধিকবার (১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৭০-এর দশক) বালুচরা বিদ্রোহ করেছে, কিন্তু সবই পাকিস্তানের দমননীতি দ্বারা রুদ্ধ হয়েছে। ২০০৫ সালে প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও বালুচিস্তানের গভর্নর নওয়াব আকবর খান বুগতি যখন আবার বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন, পাকিস্তান সরকার তাঁকে হত্যা করে। এই ঘটনার পর থেকে বালুচ সংগ্রাম নতুন মাত্রা পায়।