নিউইয়র্ক মেয়র নির্বাচনের ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে জয়ী হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বিতর্কের কেন্দ্রে চলে এসেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রার্থী জোহরান মামদানি (Mamdani)। তিনি বিখ্যাত ভারতীয়-আমেরিকান চলচ্চিত্র নির্মাতা মীরা নায়ারের ছেলে। তাঁর (Mamdani) জয় নিয়ে এখন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রবল বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প থেকে শুরু করে নিউইয়র্ক সিটির বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস পর্যন্ত—সবাই মামদানিকে (Mamdani) তীব্রভাবে আক্রমণ করেছেন। কেউ তাঁকে বলছেন “স্নেক অয়েল সেলসম্যান”, কেউবা সরাসরি “১০০% কমিউনিস্ট” বলে কটাক্ষ করছেন।
মূলত মামদানির (Mamdani) নির্বাচনী প্রচারে ইসরায়েলের তীব্র সমালোচনা, ফিলিস্তিনিদের প্রতি প্রকাশ্য সমর্থন এবং নানা উচ্চাশী প্রতিশ্রুতি বিতর্কের সূত্রপাত করেছে। মঙ্গলবারের প্রাইমারি নির্বাচনে তিনি নিউইয়র্কের প্রাক্তন গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমোকে হারান। জয় লাভের পর, বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস এক টিভি সাক্ষাৎকারে মামদানিকে (Mamdani) “লোক ঠকানোর ব্যবসায়ী” বলে কটাক্ষ করেন। অ্যাডামস জানিয়েছেন, তিনি এবার স্বাধীন প্রার্থী হিসেবে নভেম্বরের মূল নির্বাচনে মামদানির বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
৩৩ বছর বয়সী মামদানি (Mamdani) দাবি করেছেন, নিউইয়র্ক সিটির ভাড়াবাড়িতে ভাড়া বৃদ্ধির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা, শহরের তরফে নিজস্ব গ্রোসারি স্টোর চালু করা, বিনামূল্যে বাস পরিষেবা ও শিশুসেবা দেওয়া তাঁর নির্বাচনী অঙ্গীকারের অংশ। এ সব পরিকল্পনার জন্য প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন, যা তিনি নিউইয়র্কের ধনীদের ওপর কর বাড়িয়ে তোলার প্রস্তাব দিয়েছেন (Mamdani)।
কিন্তু অ্যাডামস বলেছেন, শহরের মেয়র (Mamdani) হিসেবে এই ধরনের কর আরোপ করা সম্ভব নয়। “উচ্চ আয়ের ১% মানুষের ওপর কর বাড়ানোর ক্ষমতা সিটি মেয়রের নেই,” বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এই বিতর্কে ট্রাম্পও যুক্ত হয়েছেন। তিনি নিজের Truth Social প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, “ডেমোক্র্যাটরা এবার সীমা ছাড়িয়ে গেছে। মামদানি (Mamdani) একজন ১০০% কমিউনিস্ট পাগল! এবার সে মেয়র হওয়ার পথে!” ট্রাম্প আরও বলেন, মামদানির কণ্ঠস্বর কষ্টদায়ক, সে বোকা, এবং AOC-সহ কিছু “বোকা বামপন্থীদের” সমর্থনে চলছে।
সাবেক মার্কিন অর্থমন্ত্রী লরেন্স সামার্স এবং সেন্ট্রিস্ট ডেমোক্র্যাট নেতা ম্যাট বেনেটও মামদানির জয়কে দলের জন্য বিপজ্জনক বলে উল্লেখ করেছেন। বেনেট বলেছেন, মামদানি অত্যন্ত প্রতিভাবান, তরুণ এবং সাবলীল বক্তা হলেও তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শ ও ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যুক্ত থাকা রিপাবলিকানদের জন্য বড় অস্ত্র হয়ে উঠবে।
২০১৮ সালে আমেরিকার নাগরিকত্ব পাওয়া মামদানি জন্মেছেন উগান্ডার কামপালায়, ভারতীয় বংশোদ্ভূত পরিবারে। কিছুদিন তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে কাটান, এরপর সাত বছর বয়সে নিউইয়র্কে চলে আসেন। তাঁর মা মীরা নায়ার ‘মনসুন ওয়েডিং’, ‘দ্য নেমসেক’ ও ‘মিসিসিপি মাসালা’-র মতো বিখ্যাত সিনেমা তৈরি করেছেন। তাঁর বাবা মাহমুদ মামদানি কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন খ্যাতনামা অধ্যাপক।
সম্প্রতি মামদানি(Mamdani) বিয়ে করেছেন সিরিয়ান-আমেরিকান শিল্পী রামা দুয়াজিকে, যাঁর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়েছিল একটি ডেটিং অ্যাপে। তাঁরা এখন অ্যাস্টোরিয়া, কুইন্সে থাকেন।
মামদানি (Mamdani) আন্তর্জাতিক ইস্যুতেও খোলামেলা মত প্রকাশ করেছেন, বিশেষ করে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত নিয়ে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু নিউইয়র্ক এলে তাঁকে গ্রেপ্তারের পক্ষে মত দিয়েছেন মামদানি, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কথা উল্লেখ করে। তাঁর সমর্থকরা তাঁকে নিউইয়র্কের জন্য সাহসী ও প্রয়োজনীয় এক নতুন কণ্ঠস্বর হিসেবে দেখছেন।