প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) যখন ফের ক্ষমতায় ফিরে প্রথম বিদেশ সফরে বের হয়েছেন, তখন মধ্যপ্রাচ্যের উপসাগরীয় দেশগুলোও নতুন করে আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এই সফর ১৩ থেকে ১৬ মে পর্যন্ত চলবে, যেখানে ট্রাম্প (Donald Trump) সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) এবং কাতার সফর করবেন।
কেন গুরুত্বপূর্ণ এই সফর?
এই সফর শুধু সৌজন্য নয়, ট্রাম্প(Donald Trump) এ সফরকে কাজে লাগাতে চাইছেন চীন ও ইরানের প্রভাব মোকাবেলার কৌশল হিসেবে। ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির আওতায় তিনি মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন নেতৃত্বাধীন একটি চুক্তিনির্ভর কূটনৈতিক মডেল গড়ে তুলতে চাচ্ছেন (Donald Trump)। তবে এই প্রচেষ্টা ঘিরে ট্রাম্পের স্বার্থের সংঘাত ও স্বচ্ছতার অভাব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে সমালোচনা চলছে।
বিপুল বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি
ট্রাম্পের (Donald Trump) সৌদি সফরের দিন (১৩ মে) রিয়াদে একটি বিশাল বিনিয়োগ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। এতে ব্ল্যাকরকের ল্যারি ফিঙ্ক, সিটিগ্রুপের জেইন ফ্রেজার ও গুগলের রুথ পোরাতসহ শীর্ষ মার্কিন কোম্পানির নির্বাহীরা অংশ নিচ্ছেন।
ট্রাম্প (Donald Trump) মার্চ মাসে ঘোষণা দেন যে, সৌদি আরব আগামী কয়েক বছরে আমেরিকায় মোট $১.৯ ট্রিলিয়ন বিনিয়োগ করবে। এর মধ্যে $১.৩ ট্রিলিয়ন থাকবে সামরিক সরঞ্জাম ও অন্যান্য প্রকল্পে। সংযুক্ত আরব আমিরাত ঘোষণা দিয়েছে, তারা পরবর্তী ১০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে $১.৪ ট্রিলিয়ন বিনিয়োগ করবে।
এই দেশগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) প্রযুক্তিতে বিপুল অর্থ ঢালছে। ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, নির্বাচিত উপসাগরীয় দেশগুলোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র চিপ রপ্তানির বিধিনিষেধ শিথিল করতে পারে।
এদিকে কাতারও প্রায় $৩০০ বিলিয়নের চুক্তি ঘোষণা করতে যাচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে $২ বিলিয়নের ড্রোন ও বোয়িং-এর কাছ থেকে বিমান কেনা। গাল্ফ নিউজের তথ্য অনুযায়ী, উপসাগরীয় এয়ারলাইন্সগুলো $৩ ট্রিলিয়ন ছাড়িয়ে যেতে পারে বিভিন্ন অর্ডার ও অংশীদারিত্বে।
তবে কাতারের রাজপরিবার থেকে ট্রাম্প একটি বিলাসবহুল বিমান উপহার গ্রহণ করায় রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে। এ বিমানটি এখন ‘এয়ার ফোর্স ওয়ান’ হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
ট্রাম্পের গাল্ফে ব্যবসায়িক সম্পর্ক
ট্রাম্প পরিবারের ব্যবসা গাল্ফ অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে। সৌদি আরবে তারা দার গ্লোবালের সঙ্গে মিলিতভাবে রিয়াদ ও জেদ্দায় বিলাসবহুল আবাসিক প্রকল্প করছে। দুবাইয়ে রয়েছে ট্রাম্প ইন্টারন্যাশনাল গলফ ক্লাব এবং নতুন একটি ট্রাম্প টাওয়ার নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে।
এইসব ব্যবসা ট্রাম্পের রাজনৈতিক পদক্ষেপে প্রভাব ফেলতে পারে বলে সমালোচকরা সতর্ক করছেন। এতে স্বার্থের সংঘাত ও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
আব্রাহাম চুক্তি পুনরুজ্জীবনের চেষ্টা?
ইসরায়েলের সঙ্গে আরব দেশগুলোর সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ড’ ট্রাম্পের একটি মূল কূটনৈতিক অর্জন ছিল। এবার তিনি আরও কিছু দেশকে এই চুক্তিতে আনার চেষ্টা করছেন। ট্রিপের আগেই তিনি হামাসের সঙ্গে এক বন্দিমুক্তি চুক্তি করেছেন, যা গাজা সংকটের একটি নতুন দিগন্ত খুলতে পারে।
তবে সৌদি আরব এখনো এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি, তারা এর জন্য একটি গ্রহণযোগ্য ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রূপরেখা চায়। অন্যদিকে, ইউএই ইতোমধ্যে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করেছে এবং সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গেও সংলাপে বসেছে।
কাতার ও ইউএই সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সঙ্গে মিলিত হয়ে ‘ইনিওখোস ২০২৫’ নামক যৌথ বিমান মহড়ায় অংশ নিয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতামত
ফয়সাল জে. আব্বাস, সৌদি মালিকানাধীন আরব নিউজ-এর প্রধান সম্পাদক, বলেছেন:
“যুক্তরাষ্ট্রের ফেলে রাখা শূন্যতা অন্য প্রতিযোগীরা পূরণ করছে। তাই এই বিনিয়োগ শুধু বিলাসিতা নয়—বরং ভবিষ্যৎ গড়ার কৌশল।”
ড. আব্দুলখালেক আব্দুল্লাহ, আমিরাতের রাজনৈতিক বিশ্লেষক, মন্তব্য করেছেন:
“আমিরাত এখন শুধু একটি আরব রাষ্ট্র নয়, বরং এশিয়াকেও আপন করে নিচ্ছে। তাই তারা চায়, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে চীন, ভারত, জাপানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে।”
লিনা খতিব, চ্যাথাম হাউসের গবেষক, লিখেছেন:
“যদি সৌদি আরব ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে, তাহলে অধিকাংশ আরব দেশও তা করবে। এই মুহূর্তে সৌদি-যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে এক ঐতিহাসিক পরিবর্তন সাধন করতে পারে।”
সামনে কী হতে পারে?
এই সফরে শুধু বিনিয়োগ নয়, বরং গাজা সংকট ও বৃহত্তর কূটনৈতিক সম্পর্কের দিক থেকেও ট্রাম্পের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। উপসাগরীয় দেশগুলো তাদের বৈচিত্র্যময় বৈদেশিক নীতির মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করছে, এবং ট্রাম্প এই অঞ্চলের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করার সুযোগ খুঁজছেন।