পাকিস্তানে “তেল” শব্দটা খবর হয় কেবলমাত্র যখন জ্বালানির দাম আকাশছোঁয়া হয়ে যায়, কিংবা ইরান থেকে চোরাপথে তেল (Oil) আসে। জুলাই মাসে যখন পেট্রলের দাম ৫.৩৬ টাকা বাড়িয়ে প্রতি লিটার ২৭২.১৫ পাকিস্তানি রুপি করা হয়, তখন জনতা ক্ষোভে ফেটে পড়ে। কারণ তখন আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের (Oil) দাম ছিল নিম্নগামী।
এই অবস্থার মাঝেই হঠাৎই আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পাকিস্তানের ‘তেল-স্বপ্ন’ (Oil) বিক্রির কথা বলে চমকে দিলেন । একদিন আগে ভারতের ওপর ২৫% আমদানি শুল্ক ও জরিমানা চাপিয়ে দেওয়ার পর, ট্রাম্প বলেন, আমেরিকা এবং পাকিস্তান নাকি একত্রে কাজ করবে পাকিস্তানের ‘বৃহৎ তেল ভাণ্ডার’ খুঁজে বের করতে। এমনকি ট্রাম্পের বিশ্বাস, “হয়তো একদিন পাকিস্তান ভারতকে তেল (Oil) রফতানি করবে।”
ট্রাম্পের এই দাবি শুনে অনেকেই হতবাক। কারণ, বাস্তবে পাকিস্তানের এমন কোনও ‘ম্যাসিভ অয়েল রিজার্ভ’ নেই। এই গল্পের শুরু ২০১৯ সালে, যখন পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ঘোষণা দেন, তারা সম্ভবত “এশিয়ার সবচেয়ে বড় তেল ও গ্যাস রিজার্ভ” খুঁজে পেয়েছেন (Oil)।
কিন্তু খান সাহেবের ওই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাকিস্তানের পেট্রোলিয়াম ডিভিশন সেই দাবিকে খারিজ করে দেয় (Oil)। করাচিভিত্তিক ডন পত্রিকার ২০২৪-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন জায়ান্ট ExxonMobil, ইতালির ENI, পাকিস্তান পেট্রোলিয়াম লিমিটেড এবং OGDCL প্রায় ৫,৫০০ মিটার গভীরে খনন চালালেও কোনও তেল বা গ্যাসের সন্ধান মেলেনি।
তখনই এক কর্মকর্তা বলেন, “খননের কাজ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।”
তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানের প্রমাণিত তেল মজুত মাত্র ৩৫৩.৫ মিলিয়ন ব্যারেল (২০১৬ সালের হিসেবে)। এটি বিশ্বের মোট তেল মজুতের মাত্র ০.০২১%।
ভারতের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, ভারত তৃতীয় বৃহত্তম তেল ভোক্তা দেশ, যার প্রমাণিত মজুত ৪.৯ বিলিয়ন ব্যারেল — যা বিশ্বের মোট মজুতের প্রায় ০.২৯%।
পাকিস্তানের তেলের বেশিরভাগ অংশ রয়েছে বালোচিস্তানে — একটি বিদ্রোহী প্রদেশ, যারা দীর্ঘদিন ধরে ইসলামাবাদ-রাওয়ালপিন্ডি শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। ফলে সেখানে উত্তোলন প্রায় অসম্ভব।
ট্রাম্প যেভাবে ‘তথ্য’কে পাত্তা না দিয়ে মনের মতো বক্তব্য দেন, তাতে স্পষ্ট, তাকে কেউ তেল-মালিশ দিয়ে এই স্বপ্ন দেখিয়েছে। অনেকেই কটাক্ষ করে বলছেন, ট্রাম্প হয়তো পাকিস্তানের বাস্তব তেল নয়, বরং ‘রাজনৈতিক তেল’তেই মজে গেছেন!
এতটাই যে, ট্রাম্প পরিবার নাকি পাকিস্তানের ‘ক্রিপ্টোকারেন্সি স্বপ্ন’-তেও পা দিয়ে ফেলেছে — এমন একটি দেশের, যার অর্থনীতি চিরকাল ভিক্ষার থালায় নির্ভর করে চলে।
২০২৪ সালে পাকিস্তান-আমেরিকার মোট বাণিজ্য দাঁড়ায় মাত্র ৭.৩ বিলিয়ন ডলারে। সেখানে ভারত-আমেরিকার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ১২৯ বিলিয়ন ডলার।
তাহলে প্রশ্ন উঠছে, ট্রাম্পের এই ‘তেল স্বপ্ন’ আসলে কীসের ইঙ্গিত? পাকিস্তান কি আবারও ভুয়ো স্বপ্ন দেখিয়ে রাজনৈতিক সুবিধা নিতে চাইছে?