ঘরে-বাইরে চরম চাপে ইসলামাবাদ (BLA)। একদিকে অর্থনৈতিক টানাপোড়েন, অন্যদিকে সামরিক হুঁশিয়ারির মধ্যেই এবার ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় কেঁপে উঠল গোটা পাকিস্তান (BLA)। দেশের ৫৮টি জায়গায় ৭৮টি অভিযান চালানোর দাবি করল Baloch Liberation Army (BLA)। বিদ্রোহী গোষ্ঠীর তরফে জানানো হয়েছে, এই হামলাগুলি তাদের নতুন স্ট্র্যাটেজিক পরিকল্পনা ‘অপারেশন হিরোফ ২.০’-র অংশ।
BLA মুখপাত্র জিয়ান্দ বালোচ এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘‘এই সব আক্রমণ পাকিস্তানি রাষ্ট্রীয় দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরোধের ধারাবাহিক অংশ। বালুচিস্তানের সম্পদ লুট এবং সামরিক দমন নীতির বিরুদ্ধে এটি আমাদের প্রত্যুত্তর।’’
রাস্তা দখল, সেনাঘাঁটিতে হামলা
শনিবার রাতে খুজদার জেলার ওরনাচ ক্রসে পাকিস্তানের জাতীয় সড়কের নিয়ন্ত্রণ নেয় BLA যোদ্ধারা। প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে তারা সড়কে তল্লাশি চালায় এবং প্রাকৃতিক সম্পদ বহনকারী যান আটক করে। এছাড়া স্থানীয় একটি লেভিস ফোর্স চেকপোস্টে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
রবিবার রাতে নোকাবাদ ও পঞ্জগুড়ে পাক সেনার ঘাঁটিতে হামলা চালায় বিদ্রোহীরা। স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র ও রকেট লঞ্চার দিয়ে চলে তীব্র গোলাগুলি। এই আক্রমণে ২ জন সেনা নিহত এবং কমপক্ষে ৫ জন আহত হয়েছেন বলে দাবি BLA-র।
একের পর এক হামলা, ঘুম ছুটেছে সরকারের
গত ৮ মে বালুচিস্তানে IED বিস্ফোরণে উড়ে যায় পাকিস্তান সেনার কনভয়, মৃত্যু হয় ১২ জন জওয়ানের। এই হামলার দায়ও নেয় BLA। তার আগে ৬ মে-তেও সেনার কনভয়ে আক্রমণ চালায় তারা।
বিদ্রোহী তৎপরতায় উদ্বিগ্ন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শাহিদ খাকান আব্বাসি মন্তব্য করেন, “বালুচিস্তান মুঠো থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। সন্ধে নামলে আর চেনাই যায় না অঞ্চলটাকে।”
ভয় বাড়াচ্ছে জঙ্গিদের দাপট
দুই দশকের বেশি সময় ধরে অশান্ত বালুচিস্তান। চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলি প্রথমে সরকারবিরোধী হামলা চালালেও এখন সরাসরি সামরিক বাহিনীকে নিশানা করছে। শহর হোক বা প্রত্যন্ত গ্রাম—প্রতিটি জায়গায় বাড়ছে BLA-র প্রভাব।
পাক সেনা যদিও সাম্প্রতিক দুটি অভিযানে ১০ জন BLA জঙ্গিকে খতম করার দাবি করেছে, তবে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় নাশকতা ঠেকাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ইসলামাবাদকে। মার্চ মাসে Jaffar Express হাইজ্যাক করে নিয়ন্ত্রণ নেয় BLA। সেবারও পাক সেনা ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল।
সুতরাং স্পষ্ট, শুধু কাশ্মীর বা সীমান্তে নয়—পাকিস্তানের ভিতরেই জন্ম নিচ্ছে আরেক লড়াই। বালুচিস্তানকে দমন করতে না পারলে পরিস্থিতি আরও ঘোরাল হতে চলেছে বলে মত বিশ্লেষকদের।