ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকাশ্যে H-1B ভিসার পক্ষে বক্তব্য দেওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই মার্কিন রাজনীতিতে শুরু হয়েছে নতুন ঝড়। রিপাবলিকান কংগ্রেসউইম্যান মারজোরি টেইলর গ্রিন ঘোষণা করেছেন, তিনি এমন একটি আইন প্রস্তাব আনছেন যা কার্যত আমেরিকার জনপ্রিয় H-1B ভিসা প্রোগ্রামকে ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ তুলে দেবে। আর এই ঘোষণা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন হাজার হাজার ভারতীয় পেশাদার, কারণ এই ভিসার সবচেয়ে বড় উপভোক্তা ভারতীয়রাই।
গ্রিন দাবি করেছেন, মার্কিন সংস্থাগুলি—বিশেষত বিগ টেক, এআই কোম্পানি, হাসপাতাল এবং বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রি—ইচ্ছাকৃতভাবে H-1B ব্যবহারের নামে আমেরিকান কর্মীদের সুযোগ কেড়ে নিচ্ছে। তাঁর অভিযোগ, এই ভিসা বিদেশি কর্মীদের ঢুকিয়ে দেশে “আমেরিকানদের চাকরি ছিনিয়ে নেয়”, আর তাই এই নীতি আমূল বদলানো জরুরি। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, “আমেরিকানরা পৃথিবীর সবচেয়ে প্রতিভাবান মানুষ। আমি শুধু আমেরিকানদের জন্য কাজ করি এবং আমেরিকানদের স্বার্থকেই প্রথমে রাখব।”
তাঁর বিলের খসড়া অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য, ইঞ্জিনিয়ারিং, ম্যানুফ্যাকচারিং—সব ক্ষেত্রেই বিদেশি কর্মীদের প্রবেশ বন্ধ করে স্থানীয়দের অগ্রাধিকার দিতে হবে। H-1B প্রোগ্রামকে তিনি “দুর্নীতিগ্রস্ত, দেশবিরোধী এবং আমেরিকান স্বপ্নের পথে সবচেয়ে বড় বাধা” বলে দাবি করেছেন। যদিও বিলটিতে শুধু একটি ছোট ব্যতিক্রম রাখা হয়েছে—প্রতি বছর ১০ হাজার ডাক্তার-নার্সের জন্য বিশেষ ভিসা। তবে সেগুলিও আগামী দশ বছরে পুরোপুরি তুলে দেওয়া হবে, যাতে সেই সময়ের মধ্যে দেশীয় ডাক্তার তৈরির ব্যবস্থা করা যায়।
সবচেয়ে বিতর্কিত অংশ হলো, এই বিল H-1B থেকে “গ্রিন কার্ডে যাওয়ার পথ” পুরোপুরি বন্ধ করে দেবে। অর্থাৎ ভিসার মেয়াদ শেষ হলে বিদেশি কর্মীদের বাধ্যতামূলকভাবে দেশে ফিরে যেতে হবে। মার্কিন আইটি সেক্টরে কর্মরত ৭০ শতাংশেরও বেশি H-1B ভিসাধারী ভারতীয়। তাঁদের কাছে এই ঘোষণা নতুন আতঙ্কের নাম।
এর আগে ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই H-1B প্রোগ্রামের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করেছিলেন। তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে যোগ্য কর্মীর অভাব রয়েছে। টেক এবং ডিফেন্সের মতো ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক দক্ষতা আনা ছাড়া উপায় নেই। সাক্ষাৎকারগ্রহীতা যখন বলেন, আমেরিকায় যথেষ্ট প্রতিভা রয়েছে, তখন ট্রাম্প সোজা উত্তর দেন—“না, নেই। কিছু প্রতিভা আমাদের এখানে নেই। বেকার লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা কাউকে আপনি তুলে এনে মিসাইল কারখানায় ঢুকিয়ে দিতে পারবেন না।”
ট্রাম্পের সেই মন্তব্যের পরই গ্রিনের এই আক্রমণাত্মক বিলকে ঘিরে তৈরি হয়েছে নতুন উত্তাপ। বিলটি পেশ হলে মার্কিন কংগ্রেসে আবারও তীব্র বিতর্ক শুরু হবে বলে মনে করা হচ্ছে।












