বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ফের আগুন জ্বালিয়ে দিল ছাত্র আন্দোলন (Bangladesh)। গোপালগঞ্জে ফের রক্তাক্ত সংঘর্ষ—আর সেই আঁচ এবার ছড়াল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজভিটেতেও। গতকাল বুধবার ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি)-র ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গোটা শহরে সৃষ্টি হয় রণক্ষেত্রের পরিস্থিতি (Bangladesh)। সংঘর্ষ, ভাঙচুর, আগুন, গুলি, এমনকি মৃত্যুর মিছিল—বাংলাদেশ আবারও দাঁড়াল এক টালমাটাল রাজনৈতিক মোড়ে (Bangladesh)।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এনসিপির ছাত্র ও যুব শাখা সকাল থেকেই গোপালগঞ্জের পথে পথে মিছিল শুরু করে (Bangladesh)। প্রশাসন পূর্বাভাস পেয়েই মোতায়েন করে বিপুল সংখ্যক পুলিশ। কিন্তু পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায়, যখন আওয়ামী লিগের কর্মী-সমর্থকরা পথে নামেন মিছিল আটকাতে v। অভিযোগ, শুধু আওয়ামী লিগ নয়, তাতে যোগ দেয় বিএনপি এবং নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সদস্যরাও। মুহূর্তেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা। শুরু হয় সংঘর্ষ, গাড়ি ভাঙচুর, ককটেল বোমা বিস্ফোরণ এবং গুলি চলাচল। প্রাণ হারান অন্তত চারজন, গুলিবিদ্ধ হন নয়জনেরও বেশি। আহতের সংখ্যা পঞ্চাশ ছাড়িয়ে গেছে (Bangladesh)।
নিহতদের মধ্যে রয়েছেন এনসিপির কর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দারা। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে গোপালগঞ্জে জারি করা হয় ১৪৪ ধারা। মোতায়েন করা হয় সেনাবাহিনী, র্যাব ও বিজিবির যৌথ বাহিনী। সেনা নামানোর পরও পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে সাউন্ড গ্রেনেড ও গুলি চালাতে বাধ্য হয় নিরাপত্তাবাহিনী।
বেলা ২টার দিকে গোপালগঞ্জে পৌঁছন এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা—আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ এবং উত্তরাঞ্চলের সংগঠক সারজিস আলম। সমাবেশস্থলে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় আরও হামলা। প্রাণ বাঁচাতে নেতারা আশ্রয় নেন গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপারের দফতরে। সেখান থেকেই সেনা, পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির কড়া নিরাপত্তায় তাদের গোপালগঞ্জ থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়।
রাত ৯টা ৩০ মিনিটে খুলনায় সাংবাদিক সম্মেলন করে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করেন, “গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিচ্ছে এনসিপি—এই কারণেই আমাদের নেতাকর্মীদের হত্যার ছক কষে হামলা চালিয়েছে আওয়ামী লিগ, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ এবং তাদের সন্ত্রাসীরা।” তাঁর আরও অভিযোগ, স্থানীয় মসজিদে জোর করে ঢুকে মাইকিং করে সাধারণ মানুষকে উত্তেজিত করার কাজ করেছে ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা।
এই ভয়াবহ ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সারাদেশে প্রতিবাদ ডাকে এনসিপি। ঢাকায় শাহবাগ-সহ বহু স্থানে অবরোধে নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং এনসিপির ছাত্রযুব শাখা। অন্তত ২০টি জায়গায় মহাসড়ক অবরোধ হয়। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছয় যে, গোপালগঞ্জ শহরের বিভিন্ন অংশে গাছ কেটে রাস্তা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। প্রশাসনের টহল বাহিনীকে বারবার লক্ষ্য করে ইট ছোড়া ও হামলার ঘটনা ঘটে।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার, যার নেতৃত্বে রয়েছেন নোবেলজয়ী মহম্মদ ইউনূস, এই ঘটনার কড়া নিন্দা করে সরকারি বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “গণতান্ত্রিক অধিকারে হামলা বরদাস্ত করা হবে না। দোষীদের দ্রুত শনাক্ত করে কঠোরতম শাস্তি দেওয়া হবে।”
আজ সন্ধে ৬টা পর্যন্ত গোপালগঞ্জে কার্ফু জারি থাকবে বলে জানানো হয়েছে। তবে প্রশাসনের আশঙ্কা, রাতে পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে। সেই কারণে আরও ১,৫০০ পুলিশ মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।