বাংলাদেশে (Bangladesh) আবারও শোক ও ক্ষোভের ঝড় তুলেছে এক প্রবীণ সাংবাদিকের মৃত্যু। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারকে সম্প্রতি জোরপূর্বক ছুটিতে পাঠানো হয়েছিল । তারপরও থেমে থাকেনি হুমকি। শেষ পর্যন্ত মুন্সিগঞ্জে মেঘনা নদী থেকে তাঁর নিথর দেহ উদ্ধার করা হয় (Bangladesh) ।
এই মৃত্যুকে ঘিরে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে তীব্র আলোচনা। অনেকে বলছেন, এটি নিছক দুর্ঘটনা বা আত্মহত্যা নয়, বরং এক ধরনের ঠান্ডা মাথার হত্যা (Bangladesh) ।
ঘটনার সূত্রপাত গত ১৪ আগস্ট। একটি বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিক ‘ইতিহাসের ঘটনাবহুল আগস্ট’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ ছাপে, যার দায়িত্বে ছিলেন বিভুরঞ্জন সরকার। অভিযোগ উঠেছে, ওই লেখায় সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল। আর তাতেই ক্ষিপ্ত হন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম (Bangladesh) ।
এরপর তিনি সরাসরি সম্পাদককে ফোন করে হুমকি দেন—পত্রিকার লাইসেন্স বাতিল করা হবে, গোয়েন্দা সংস্থা লেলিয়ে দেওয়া হবে। শুধু তাই নয়, আটজন সাংবাদিকের একটি তালিকা পাঠিয়ে তাদের চাকরিচ্যুত করারও চাপ দেন।
এই চাপের মুখে পত্রিকা কর্তৃপক্ষ হঠাৎ করেই বিভুরঞ্জন সরকারকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটিতে পাঠায়। অনলাইন সংস্করণ থেকেও সরিয়ে ফেলা হয় ওই নিবন্ধ। সহকর্মীদের দাবি, এই অপমান তিনি মেনে নিতে পারেননি। এক সাংবাদিক বলেন,
“বিভুদা ছিলেন আপাদমস্তক পেশাদার। শেষ দিকে তিনি ভীষণ মানসিক চাপে ছিলেন। তাঁকে যে ভাবে ছুটিতে পাঠানো হলো আর বারবার হুমকি দেওয়া হলো, সেটা আসলে তাঁর জন্য এক ধরনের মৃত্যু পরোয়ানা ছিল।”
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ছুটিতে পাঠানোর পরও বিভুরঞ্জন সরকারকে নিয়মিত হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। এমনকি তিনি একটি খোলা চিঠিতে এই বিষয়টি উল্লেখ করেছিলেন। তিনি বারবার সম্পাদকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কোনো সাড়া পাননি। আর ঠিক এর কিছুদিন পরই, মেঘনা নদী থেকে উদ্ধার করা হয় তাঁর দেহ।
এই ঘটনা ঘিরে সাংবাদিক মহল এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়েছে। এক প্রবীণ সাংবাদিক বলেন,
“এটি স্বাধীন সাংবাদিকতার কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেওয়ার মতো। আজ বিভুরঞ্জনকে হারালাম, কাল আমাদের কারও পালা আসবে।”
মানবাধিকার কর্মীরাও এক সুরে বলছেন, এটি কেবল একটি ব্যক্তির মৃত্যু নয়, বরং দেশের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার উপর সরাসরি আঘাত। তাদের দাবি, অবিলম্বে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে।
বাংলাদেশ সাংবাদিক ইউনিয়নও কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছে। তাদের বক্তব্য,
“একজন সাংবাদিককে নিবন্ধ ছাপানোর জন্য হুমকি দেওয়া হবে, তারপর তাঁর লাশ নদীতে ভেসে উঠবে—এটা কোনো সভ্য সমাজে মেনে নেওয়া যায় না।”
সবচেয়ে হৃদয়বিদারক প্রতিক্রিয়া এসেছে বিভুরঞ্জন সরকারের ছেলের কাছ থেকে। তিনি বলেন,
“আমার বাবা কোনো অন্যায় করেননি। তিনি শুধু তাঁর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। যারা তাঁকে চাকরি ছাড়তে বাধ্য করেছে আর বারবার হুমকি দিয়েছে, তারাই বাবাকে হত্যা করেছে। আমরা আর কিছু চাই না, শুধু এই হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই।”
বিভুরঞ্জন সরকারের মৃত্যু বাংলাদেশে এখন এক বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে—সাংবাদিকতা কি আর নিরাপদ থাকল? মতপ্রকাশ কি শ্বাসরুদ্ধ হয়ে গেল?