একদিকে যখন ভারত পাকিস্তান উত্তেজনা তুঙ্গে, সেই সময় বালোচ লিবারেশন আর্মি (Balochistan) পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হামলা জোরদার করেছে। বালোচিস্তান লিবারেশন আর্মির তরফে মনে করা হচ্ছে, বালোচিস্তানের স্বাধীনতা এখন সময়ের অপেক্ষা শুধু (Balochistan)। এই পরিস্থিতিতে বালোচিস্তান লিবারেশন আমি পাক সেনা গোয়েন্দা ঘাঁটি লক্ষ্য করে মোট ৭১টি হামলা করেছে বলে দাবি করেছে (Balochistan)।
৭১টি হামলার দাবি, লক্ষ্য পাক সেনা ও গোয়েন্দা ঘাঁটি
এক পৃথক বিবৃতিতে বিএলএ দাবি করেছে, তারা একসহ্গে পাকিস্তানের ৫১টি জায়গায় ৭১টি হামলা চালিয়েছে, যার টার্গেট ছিল পাকিস্তানের সেনা ঘাঁটি, গোয়েন্দা কেন্দ্র ও খনিজ পরিবহণ যান। সংগঠনের মুখপাত্র জিয়ান্দ বালোচ বলেন, “ভারত-পাকিস্তান সামরিক উত্তেজনার মধ্যেই আমরা আমাদের আন্দোলনকে জোরদার করেছি। নতুন করে আমরা হামলা চালিয়েছি। অনেক ঘণ্টা ধরে চলা এই হামলার লক্ষ্য ছিল শত্রুপক্ষের সামরিক সমন্বয় ও প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি যাচাই করা।”
পাক সেনা ও আইএসআই-কে সন্ত্রাসের উৎস বলে দাবি
বিএলএ-র অভিযোগ, পাকিস্তান শান্তির কথা বললেও বাস্তবে তা কেবল একটি সাময়িক কৌশল। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “পাকিস্তানের প্রতিটি শান্তির বার্তা, যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব এবং ভ্রাতৃত্বের কথা নিছক প্রতারণা, একটি কৌশলগত চাল মাত্র।”
পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-কে ‘সন্ত্রাসের উৎস’ বলেও কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছে বিএলএ। তাদের দাবি, “পাকিস্তান কেবল জঙ্গিদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল নয়, বরং রাষ্ট্রীয় মদতে তৈরি সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলোর আঁতুড়ঘর—যেমন লস্কর-ই-তৈবা, জইশ-ই-মহম্মদ ও আইএসআইএস। এই সন্ত্রাসবাদ ছড়াতে আইএসআই-এর রয়েছে সুসংগঠিত নেটওয়ার্ক। পাকিস্তান এখন একটি পরমাণু সজ্জিত হিংস্র মতাদর্শের রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।”
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং ভারতের প্রতি বার্তা
বিএলএ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে ভারতের কাছে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও প্রতিরক্ষা সহায়তার আবেদন জানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “যদি আমরা আন্তর্জাতিক সহায়তা, বিশেষ করে ভারতের কাছ থেকে রাজনৈতিক ও প্রতিরক্ষা সহায়তা পাই, তবে বালোচ জাতি পাকিস্তানের এই সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্রকে মুছে ফেলতে পারবে। এতে শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ ও স্বাধীন বালোচিস্তানের পথ প্রশস্ত হবে।”
পরমাণু বিপদের হুঁশিয়ারি
সবশেষে, পাকিস্তান যদি এই রকম নীতিতে চলতেই থাকে, তবে তা গোটা বিশ্বের জন্য ভয়ানক পরিণতি ডেকে আনবে বলেও সতর্ক করেছে বিএলএ। “যদি পাকিস্তানকে এভাবে চলতে দেওয়া হয়, তবে একদিন এই রাষ্ট্রের অস্তিত্বই বিশ্বকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যেতে পারে। একটি মৌলবাদী সেনা প্রতিষ্ঠানের হাতে পরমাণু অস্ত্র থাকা মানেই তা সারা বিশ্বের নিরাপত্তার জন্য টাইম বোমা,”—উল্লেখ করা হয়েছে বিবৃতিতে।
পাক সেনার প্রতিক্রিয়া
পাকিস্তানি সেনাপ্রধান আসিম মুনির অবশ্য এর আগে দাবি করেছিলেন, বালোচিস্তানের ‘অস্থিরতা’ কেবলমাত্র ১,৫০০ জনের সৃষ্টি। তিনি দোষ দিয়েছেন ভারতের ঘাড়ে। যদিও বিশ্লেষকদের মতে, এটি পাকিস্তানের বহু দশকের নিপীড়ন ও সম্পদ শোষণের বিরুদ্ধে বালোচ জনগণের দীর্ঘ প্রতিরোধ আন্দোলনেরই অংশ।
প্রসঙ্গত, খনিজসম্পদে ভরপুর বালোচিস্তান থেকে দীর্ঘদিন ধরে সম্পদ তুলে নিচ্ছে ইসলামাবাদ-রাওয়ালপিন্ডি প্রশাসন, অথচ বালোচ জনগণ বঞ্চিত হচ্ছেন ন্যায্য অধিকার থেকে। সাম্প্রতিক এই বিস্ফোরক দাবিগুলি দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।