মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা চরমে। এবার সরাসরি ইরান (Iran)-ইজরায়েল সংঘর্ষে সামরিকভাবে জড়িয়ে পড়ল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। রবিবার ভোররাতে আমেরিকা তিনটি ইরানি (Iran) পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে—ফোর্ডো, নতাঞ্জ এবং ইসফাহান।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বয়ং এই অভিযান ঘোষণা করে বলেন, “এটি ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত—যুক্তরাষ্ট্র, ইজরায়েল এবং গোটা বিশ্বের জন্য।” তাঁর দাবি, এই অভিযান ছিল অত্যন্ত সফল, এবং এটি মধ্যপ্রাচ্য সংকটের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।
প্রথমে ছয়টি ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমা দিয়ে ইরানের (Iran) সবচেয়ে গোপন এবং নিরাপদ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিকরণ কেন্দ্র ফোর্ডোতে হামলা চালানো হয়। তারপর ৩০টি টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয় নতাঞ্জ ও ইসফাহানে।
নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, মিসৌরির ঘাঁটি থেকে উড়ে আসা মার্কিন B-2 স্টিলথ বোমারু বিমানগুলি টানা প্রায় ৩৭ ঘণ্টা আকাশে ছিল (Iran)। পথে একাধিকবার মধ্যআকাশে জ্বালানি ভরার মাধ্যমে তারা অভিযান চালাতে সক্ষম হয়।
এই অত্যাধুনিক B-2 স্পিরিট বিমান, যা ‘স্টিলথ বোমার’ নামে পরিচিত, ১৯৮৯ সালে প্রথম আকাশে ওড়ে এবং বর্তমানে এটি বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ও গোপন হামলার জন্য ব্যবহৃত বোমারু বিমান হিসেবে পরিচিত। এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য—শত্রুর রাডারে ধরা পড়ে না। এটির রাডার ক্রস-সেকশন মাত্র ০.০০১ বর্গমিটার, অর্থাৎ একটি ছোট পাখির সমান, যা এটিকে কার্যত অদৃশ্য করে তোলে।
এই বিমান উচ্চতা ও দূরত্বে নজির গড়েছে। এটি প্রায় ৬,০০০ নটিক্যাল মাইল দূরত্ব উড়ে যেতে পারে জ্বালানি ছাড়াই, এবং আকাশেই জ্বালানি ভরে আরও দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে পারে। ফলে শত্রুর অভ্যন্তরে গভীরতম লক্ষ্যেও আঘাত হানতে সক্ষম এই যুদ্ধবিমান। এটি পারমাণবিক ও প্রচলিত উভয় ধরনের অস্ত্র বহন করতে পারে।
গুয়ামে মোতায়েন ছিল B-2, আগেই আঁচ পেয়েছিলেন গোয়েন্দারা
সপ্তাহান্তে প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপ গুয়ামে B-2 মোতায়েন হওয়ার পর থেকেই উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। সামরিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেছিলেন, এটা হয়তো ইরানের পরমাণু কেন্দ্রগুলিতে মার্কিন হামলার প্রস্তুতি। এবং তা-ই বাস্তব হল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বোমারু বিমান দিয়েই যুক্তরাষ্ট্র ৩০,০০০ পাউন্ড ওজনের ‘Massive Ordnance Penetrator’ (MOP) বা ‘সুপার বাঙ্কার বম্ব’ ফোর্ডোর মতো দুর্গম জায়গায় ব্যবহার করতে পারে। কারণ এই বিমানই একমাত্র গোপনে এমন শক্তিশালী অস্ত্র বহন করে আঘাত হানতে সক্ষম।
এই হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যে (Iran) নতুন করে যুদ্ধ পরিস্থিতির আশঙ্কা প্রবল। ইরান (Iran) সরাসরি পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানালেও, যুদ্ধ এখন আরও ভয়ানক পরিণতির দিকে এগোচ্ছে বলেই ধারণা করছে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহল।