পুরুষশাসিত সমাজব্যবস্থার মাঝে ব্যতিক্রমী এক দৃষ্টান্ত গড়ে তুলেছে মেঘালয় (Meghalaya), অসম এবং বাংলাদেশের কিছু অঞ্চলে বসবাসকারী খাসি জনগোষ্ঠী। যেখানে অধিকাংশ সমাজে ছেলেদের প্রাধান্য থাকে, সেখানে খাসি সমাজে কন্যা সন্তানকে পরিবারের মূল কেন্দ্রবিন্দু ধরা হয়। নারীরাই (Meghalaya) এখানে পরিবার ও সম্পত্তির উত্তরাধিকারী, আর তাঁদের সিদ্ধান্তেই চলতে হয় গৃহস্থালি ও অর্থনৈতিক বিষয়।
খাসি সমাজে (Meghalaya) মেয়ের জন্ম উদযাপন করা হয়। তারা শুধু সম্পত্তির অধিকারই নয়, পান নিজস্ব পরিচয় ও স্বাধীনতাও। এই জনগোষ্ঠীর শিকড় প্রাচীন অস্ট্রিক জনগোষ্ঠীতে, যারা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বাস করত (Meghalaya)। ইতিহাস বলছে, এক সময় খাসি সমাজেও পুরুষপ্রধান পরিবার ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু দীর্ঘ যুদ্ধ এবং পুরুষদের অনুপস্থিতির কারণে ধীরে ধীরে সমাজে পরিবর্তন আসে। পুরুষেরা যুদ্ধে প্রাণ হারাতেন কিংবা বাইরে গিয়ে নতুন জীবনে মিশে যেতেন। ফলে পরিবারে নারীদের ওপর দায়িত্ব এসে পড়ে, আর সন্তানের পিতৃপরিচয় অনিশ্চিত হয়ে পড়ত (Meghalaya)।
এই সামাজিক জটিলতা থেকে মুক্তি পেতে খাসি সমাজ বেছে নেয় মাতৃতান্ত্রিক পথ(Meghalaya) —সন্তান মায়ের পদবি নেয়, সম্পত্তি মেয়েদের নামে চলে যায়, এবং পুরুষেরা বিয়ের পর স্ত্রীর বাড়িতেই বসবাস করেন। এই ব্যবস্থায় মেয়েরা শুধু নিজের পরিবারই নয়, সামগ্রিক সমাজ ব্যবস্থাতেও একটি শক্তিশালী ভূমিকা পালন করেন।
একজন (Meghalaya) খাসি নারী বলেন, “আমার সন্তানরা আমার পদবি ব্যবহার করে, সম্পত্তিও আমার নামে—এটা আমাকে গর্ব এবং সম্মান দেয়।” খাসি সমাজে মেয়েরা আজীবন বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকেন, ছেলেরা বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে চলে যান—যা এই সমাজে একেবারেই স্বাভাবিক।
এখানে বিয়েতে বড় কোনো আচার-অনুষ্ঠান হয় না (Meghalaya)। ছেলে ও মেয়ের সম্মতিতে এবং মেয়ের পরিবারের অনুমতিতে ছেলেটি বাড়িতে আসতে শুরু করে, পরে স্থায়ীভাবে থাকতে শুরু করে। সন্তান জন্ম নিলে সে মেয়ের বাড়িতেই রয়ে যায়। খাসি সমাজে ডিভোর্স খুব সাধারণ বিষয় এবং এতে কোনও সামাজিক কলঙ্ক জড়িত নয়। বিচ্ছেদের পর সন্তানের ওপর পিতার কোনও অধিকার থাকে না।
খাসি নারীরা একাধিকবার বিয়ে করতে পারেন—এবং অনেক সময় পুরুষেরা এই বিষয়ে সমানাধিকারের দাবি জানিয়ে থাকেন। যদিও তা নারীর অধিকার হরণ নয়, বরং সাম্য রক্ষার তাগিদে। এই সমাজে নারীরাই বাজার চালান, বড় সিদ্ধান্ত নেন। পরিবারের কনিষ্ঠ কন্যা ‘খাদ্দুহ’ হন মূল উত্তরাধিকারী। তিনি শুধু সম্পত্তিই নয়, পরিবারের যত্ন ও দায়িত্বও বহন করেন। তাঁর বাড়ি সব আত্মীয়স্বজনের জন্য খোলা থাকে।
খাসি সমাজের এই প্রথা শুধু মেঘালয়ের খাসি নয়, গারো এবং জৈন্তিয়া জনজাতির মধ্যেও প্রচলিত। যদিও আধুনিক সমাজের চাপে এই সংস্কৃতি কিছুটা টাল খাচ্ছে, তবু এখনও তারা তাঁদের মাতৃতান্ত্রিক ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন শক্ত হাতে।