কয়েকদিন আগেও তিনি ছিলেন এক সাধারণ চিকিৎসক। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে ছাত্রদের কাছে ছিলেন জনপ্রিয়। কিন্তু সেই মুখোশের আড়ালে যে লুকিয়ে ছিল এক ভয়ংকর গোপন পরিচয়, তা কেউই টের পাননি। হরিয়ানার আল ফলাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক শাহিন শাহিদ (Shaheen Shahid)–এর গ্রেফতারের পর একে একে সামনে আসছে এমন সব তথ্য, যা শিউরে ওঠার মতো।
পুলিশি তদন্তে জানা গিয়েছে, লখনউয়ের বাসিন্দা বছর ছেচল্লিশের শাহিন Shaheen Shahid) ভারতে জইশ-ই-মহম্মদের (Jaish-e-Mohammed) মহিলা শাখা ‘জামাত-উল-মোমিনাত’-এর দায়িত্বে ছিলেন। এই সংগঠনের প্রধান হলেন জইশ প্রধান মাসুদ আজহারের বোন সাদিয়া আজহার। আর সেই নেটওয়ার্কের ভারতীয় অংশের নেতৃত্বেই ছিলেন শাহিন। চিকিৎসার ছদ্মবেশে তিনি (Shaheen Shahid) নাকি একাধিক রাজ্যে জঙ্গি যোগাযোগ ছড়িয়ে দিচ্ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক জানিয়েছেন, শাহিনের (Shaheen Shahid) আচরণ শুরু থেকেই অস্বাভাবিক ছিল। তিনি বলেন, “কখনও কোনও অনুমতি না নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে যেতেন শাহিন। তাঁর কাছে নানা লোকজন দেখা করতে আসতেন। নিয়ম মানতেন না, অভিযোগ জমা পড়ত ম্যানেজমেন্টের কাছেও। কিন্তু কেউ ভাবতে পারেননি যে তিনি এমন বিপজ্জনক কর্মকাণ্ডে যুক্ত।”
শাহিনের (Shaheen Shahid) অতীত সম্পর্কেও রহস্য ঘনিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন জানিয়েছে, তাঁর আগের চাকরি বা কর্মজীবনের কোনও স্পষ্ট তথ্য তারা কখনও পায়নি। এখন সেই সূত্রগুলো খতিয়ে দেখছে এনআইএ। তদন্তে সহায়তা করার আশ্বাস দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও কর্মচারীরা।
পুলিশ সূত্রে খবর, ২০১৫ সালে প্রথম স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্সের পর শাহিনের ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে মুজাম্মিল শাকিল নামের এক চিকিৎসকের সঙ্গে— যিনি নিজেও জঙ্গি নেটওয়ার্কের সন্দেহভাজন সদস্য। তাঁদের মাধ্যমে নাকি ভারতে সক্রিয় মহিলা মডিউল গঠন করা হয়।
আল ফলাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরা এখন হতভম্ব। এক অধ্যাপক বলেন, “যার সঙ্গে প্রতিদিন দেখা হতো, কথা হতো, সে এমন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত— ভাবতেই পারিনি।”
এনআইএ ইতিমধ্যেই শাহিনের ডিজিটাল ডিভাইস, ফোন ও ব্যাংক ট্রান্সঅ্যাকশন খতিয়ে দেখছে। প্রাথমিক অনুমান, বিদেশি যোগাযোগও থাকতে পারে এই নেটওয়ার্কে। নিরাপত্তা বাহিনী মনে করছে, আরও বড় কোনও সন্ত্রাস মডিউলের সঙ্গে যুক্ত ছিল শাহিন ও তাঁর সহযোগীরা।
দেশজুড়ে এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। চিকিৎসকের ছদ্মবেশে কাজ করা এই মহিলার গ্রেফতারি জঙ্গি সংগঠনগুলির নতুন কৌশল নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে গোয়েন্দাদের মনে।













